বেনজীর-আজিজের ‘দুর্নীতি’ ও এমপি খুন ইস্যুতে নানা প্রশ্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মে ২০২৪, ৯:৫৮:১৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : ভারতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকা-ের পরপরই সামনে এসেছে অপরাধ জগতের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গ। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি নিয়ে দুদকের তৎপরতার ঘটনায় চলছে তোলপাড়।টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দলীয় সংসদ সদস্য আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদে থেকে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের জন্য মারাত্মক ‘ভাবমূর্তির সংকট’ হিসেবে দেখছেন অনেকে।
কারণ যাদের বিরুদ্ধে এখন অভিযোগ উঠেছে তাদের প্রত্যেকেই যার যার জায়গায় বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোর প্রভাবশালী পদে অবস্থান করেছেন।ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য খুন হওয়ার পর তার ব্যাপারে চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ আসছে তা ছিল স্থানীয় মানুষের কাছে ‘ওপেন সিক্রেট’।
পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন শীর্ষপদে কর্মরত থাকার সময় ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে। এসব বিষয় নিয়ে লোকমুখে আলোচনা ছিল আরো অনেক আগে থেকে।
অন্যদিকে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধেও ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিন থেকে। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভাইদের নানা সুবিধা দেবার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে। এনিয়ে কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক একটি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রচার হয়েছে।অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে অপরাধ চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হবার পরেও একজন ব্যক্তি কীভাবে বার বার সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন?
আবার রাষ্ট্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ আসছে তা সম্পাদনের সুযোগ পেল কী করে?ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন এসব ঘটনার দায় সরকার রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান এড়াতে পারে না। এখন সরকারকে দায় অবশ্যই নিতে হবে কারণ সরকারের দায় আছে। কারণ হচ্ছে যারা এই তিনটি ক্ষেত্রেই যে অপরাধের কারণে নৃশংস হত্যাকা- বাকি দু’জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের সার্বিক চিত্র এগুলো কিন্তু এককভাবে এই তিনজন সম্পন্ন করেননি এই অপরাধগুলো।
তিনি বলেন, দুর্নীতি হোক, অবৈধ সম্পদের মালিকানা হোক, চোরাকারবারি হোক, স্বর্ণ পাচার হোক পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে কিন্তু অংশীজন আরো অনেকেই ছিলেন, জোগসাজসকারী অনেকেই ছিলেন, সুরক্ষাকারী অনেকেই ছিলেন।
সাবেক সেনাপ্রধান সপরিবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন। যদিও নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর সাবেক সেনা প্রধান তার বিরুদ্ধে করা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের আবেদন পড়েছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনে।আর পুলিশ ও র্যাবের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করে অবসর নেয়া বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের মালিকানায় থাকা সম্পদ ক্রোক এবং অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।সরকার আলোচিত ঘটনাগুলোর দায় এড়াতে চাইলেও সরকার-বিরোধীরা এখন আনার হত্যা রহস্য, সাবেক আইজিপি এবং সেনা প্রধানের ইস্যু সামনে এনে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছে। এছাড়া বিশ্লেষকরা মনে করেন এসব ঘটনায় সরকার, দল এবং প্রতিষ্ঠানের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, এসবের সঙ্গে রাজনীতিরও যোগাযোগ আছে। তিনি বলেন, সাবেক দুই প্রধানের তদন্তের ফলাফল শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায় সেটি হবে দেখার বিষয়।
সরকারি দলের অবস্থান :
আলোচিত তিনটি ঘটনা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন অভিযুক্তদের সরকার কোনো সুরক্ষা দেবে না।
বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদলও এখন সরকারের কঠোর সমালোচনা করছে। নিয়মিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।তবে এসবের দায় সরকার নিতে অনিচ্ছুক। বেনজীর আহমেদ এবং আজিজ আহমেদকে যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।কাদের বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, যদি দুর্নীতি করে তদন্ত হচ্ছে, দুর্নীতির তথ্য পেলে তদন্ত হবে এবং কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।বাস্তবতা হলো এসব অনিয়ম বা অবৈধ সম্পদ অর্জন সবই ঘটেছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। সরকারের শীর্ষ পদে থেকে বড় কর্মকর্তারা কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয় বা অনিয়মের সুযোগ পায়?
এ প্রশ্ন তুলে অনেকে বলছেন, এটি সরকার ও দলের জন্য ‘ভাবমূর্তি সংকটের’ কারণ হতে পারে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বিবিসিকে বলেন, এসব ঘটনায় সরকারের বিব্রত হওয়ারও কোনো কারণ নেই, আওয়ামী লীগেরও বিব্রত হওয়ার কোনো কারণ নেই।