পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ : আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনিহা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মে ২০২৪, ১০:১৯:৩৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের ১৩ উপজেলার মধ্যে ৭টিই আক্রান্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ার পরও নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে বিশ্বনাথ, বিয়ানীবাজারে ও গোলাপগঞ্জে। শুক্রবার সন্ধ্যা সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। একদিনের ব্যবধানে গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন ৭ উপজেলার পানিবন্দী ৬ লাখের বেশী মানুষ।
জেলায় বন্যার্তদের জন্য ৫৪৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনিহা অনেকেরই। গত ৩ দিনে জেলায় ৫ শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন মাত্র ৪ হাজার ৮০২ জন। ফলে পানির মধ্যে বাড়ীতে অবস্থানরতরা নানা কষ্টে দিনাতিপাত করছে। প্লাবিত এলাকায় সরকারী ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে বন্যা কবলিত এলাকায় শুকনো খাবারসহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে সিলেটে গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বিশ্বনাথ, বিয়ানীবাজারে ও গোলাপগঞ্জের একাধিক এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙ্গে বিয়ানীবাজার উপজেলার একাধিক স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দী হয়ে আছেন ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন মানুষ। আক্রান্ত হয়েছে ৭ উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন। বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট। ৭ উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হলেও সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের মানুষ।
বন্যায় ইতোমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৯৩ হাজার, কানাইঘাটে ৮০ হাজার ৬০০ জন, জৈন্তাপুর উপজেলায় ৬৫ হাজার, জকিগঞ্জে ৩৯ হাজার ৮৫২ জন এবং গোয়াইনঘাটে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ জন কন্যাকবলিত হয়েছেন। এ ছাড়া সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ জন এবং গোলপগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ৫০০ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৩৫৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া কানাইঘাট উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ৩১টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৪৬৬ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
জকিগঞ্জের বন্যা কবলিত ৮টি ইউনিয়নের জন্য ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে আশ্রয় নিয়েছেন ৯৫ জন। জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জের তিনটি করে ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬৭৫ জন এবং কোম্পানীগঞ্জের ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৩৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় যথাক্রমে ৫টি ও একটি করে ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব উপজেলায় ৬৭টি ও ৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তার মধ্যে বিয়ানীবাজারে ৬০ জন এবং গোলাপগঞ্জে ১৫ জন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।জেলা প্রশাসন সূত্রে আরো জানা গেছে, পানিবন্দি পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে ইউনিয়নভিত্তিক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারা দুটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে অমলসিদ পয়েন্টে ২০৭ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পাউবো সূত্রে জানা গেছে।