দেশে ভূমিকম্প নিয়ে দুঃসংবাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০২৪, ৯:৩১:৪৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: ক্রমশ ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। মাঝেমধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে দেশ। এসব ভূমিকম্পে তেমন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিককালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। সবশেষ গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটের দিকে বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তি ছিল মিয়ানমারের মাওলাইকে। এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৪। ভূমিকম্পের কেন্দ্রে এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।
দেশের ১৩টি এলাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূগর্ভস্থ ফাটল বা চ্যুতি থাকার কারণে ঐ কম্পন হতে পারে। সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা, সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা ও ঢাকার টাঙ্গাইল জেলা। সব এলাকাই ঢাকা থেকে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু সেখানে সাত থেকে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে তা ঢাকায় বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি করতে পারে।যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষকের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯টি থেকে ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৫টি ভবন ধসে বা ভেঙে পড়বে, যা মোট ভবনের ৪০.২৮ থেকে ৬৪.৮৩ শতাংশ। এছাড়া যদি সিলেট লাইনমেন্টে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়– তাহলে ঢাকার ৪০ হাজার ৯৩৫টি থেকে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৭৪২টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যা মোট ভবন সংখ্যার ১.৯১ থেকে ১৪.৬৬ শতাংশ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট এর অধীনে পরিচালিত গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। শনিবার রাজউক আয়োজিত ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলা বিষয়ক এক সেমিনারে যা তুলে ধরেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এবং প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল লতিফ হেলালী।
তিনি জানান, রাজউক এলাকার অধীনে ঢাকায় ২১ লাখ ৪৭ হাজার ২১৯টি ভবন রয়েছে, যার মধ্যে পাকা ভবন ৫ লাখ ১৩ হাজার ৫০৭টি। ৩ হাজার ২৫২টি (পাকা) ভবনের উপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে অতি-ঝুঁকিতে থাকা ৪২টি ভবন সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হেলালী বলেন, টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯টি থেকে ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৫টি ভবন ধসে বা ভেঙে পড়বে, যা মোট ভবনের ৪০.২৮ থেকে ৬৪.৮৩ শতাংশ। এছাড়া যদি সিলেট লাইনমেন্টে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়– তাহলে ঢাকার ৪০ হাজার ৯৩৫টি থেকে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৭৪২টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যা মোট ভবন সংখ্যার ১.৯১ থেকে ১৪.৬৬ শতাংশ।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী সতর্ক করে বলেন, মধুপুর ফল্টে যদি সকালের দিকে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়– তাহলে ঢাকায় ২ লাখ ১০ হাজার থেকে ৩ লাখ ১০ হাজার মানুষ নিহত হবে। দুপুরে হলে ২ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৪ লাখ এবং রাতে হলে ৩ লাখ ২০ হাজার থেকে ৫ লাখ মানুষ নিহত হবে।
এদিকে, দেশের ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে সাত থেকে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে তীব্র কম্পন অনুভূত হতে পারে, যা এই শহরের দুর্বল ভবনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ঢাকার সম্প্রসারিত বা নতুন নতুন আবাসিক এলাকার মাটি নরম ও দুর্বল। এ ধরনের মাটিতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মেনে বহুতল ভবন হলে তা মাঝারি মাত্রার কম্পনেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। লালমাটির এলাকায় যেসব এক থেকে তিনতলা ভবন নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।
ভূমিকম্পে মানুষের মৃত্যুর ৯০ শতাংশই হয় ভবনধসে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ভূমিকম্প গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে ১৩টি ভূগর্ভস্থ চ্যুতি রয়েছে। তবে তার সব কটি ঢাকা থেকে বেশ দূরে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্প হলে ঢাকায় অনেক ভবন ভেঙে পড়তে পারে।