রাতে ভারত গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে সকালে
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুন ২০২৪, ৮:০৮:৩৯ অপরাহ্ন
কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি: রাত ৯টায় নুরুজ জামিনকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায় জুবেদ, লিয়াকত ও হৃদয়। রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। ঝড়তুফানের মধ্যে সারারাত বসে পার করেন স্ত্রী স্মৃতি বেগম। স্বামীর মোবাইলে কল দিয়ে না পেয়ে জুবেদের মোবাইলে কল দিতে থাকেন স্মৃতি। ৯০টা কল দিলেও সে রিসিভ করেনি। সকালে খবর পান নারাইনপুর সীমান্তে কুত্তাখালী নদীতে স্বামী নুরুজ জামিনের লাশ পাওয়া গেছে। কাথাগুলো বলছিলেন নুরুজ জামিনের স্ত্রী স্মৃতি বেগম। স্মৃতি বেগমের ৩ বছরের আফসার ও ২ বছরের লিমা নামে ২টি সন্তান রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতে গরু, মোটরসাইকেল, টিভিসহ বিভিন্ন জিনিস চুরি করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চিকাডহর গ্রামের জুবেদ, লিয়াকত ও হৃদয়সহ তাদের ৭ থেকে ৮ জনের দল। শনিবার রাতে তারা দল বেঁধে নারাইনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত যায়। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ভারতীয় নাগরিকরা তাদেরকে ধাওয়া করে। এসময় নুরুজ জামিনকে তারা ধরে ফেলে।
এক ভিডিওতে দেখা যায়, রাতে ভারতীয় নাগরিকরা নুরুজ জামিনের হাত পেছনের দিকে বেঁধে মারধর করছে। এ সময় সে বলছে আব্দুন নূরের পুয়া (ছেলে), সুরুজ আলীর পুয়া, বাবুলের পুয়া আমার লগে আছিল (সাথে ছিল) তারা চুরি করেছে। আরেক ভিডিওতে দেখা যায় রাতে নুরুজ জামিনকে মেরে লোহার পাইপের মাধ্যমে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এর দুই দিন আগে ভারত থেকে রবি নামের একজনের মোটরসাইকেল চুরি হয়। রাত প্রায় ১১টায় এই মোটরসাইকেল খোঁজাখুঁজি করে ভারতীয় ৫-৭ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের নারাইনপুর ও চিকাডহর গ্রামে আসে। তারা বলে যায় এই চোরদের পেলে আর জীবিত ফেরত দিবে না।
রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় স্থানীয় লোকজন ঠেলা জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায় উপজেলার নারাইনপুর সীমান্তের ১২৪৭ এর ৫এস পিলারের পাশে। এ সময় কুত্তাখালী নদীর কিনারায় নুরুজ জামিনের লাশ ভেসে থাকতে দেখে তার বাড়িতে খবর দেয়। আত্মীয়রা এসে নদী থেকে তার লাশ তীরে তুলে রাখে। এ সময় তার হাত পেছনের দিকে বাধা ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশের হাতের ভিতর দিয়ে লোহার পাইপ ঢুকানো ছিল। পরে স্থানীয়রা পুলিশ ও বিজিবিকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় ভারতীয় বিএসএফ এর ভোলাগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সেখানে আসেন। এ সময় স্থানীয়রা তার কাছে অভিযোগ করেন ভারতীয়রা তাকে মেরে এখানে রেখে গেছে।
বিজিবির মিডিয়া উইং জানায়, নুরুজ জামিনের আত্মীয় স্বজনের সাথে আমাদের ফোর্সের কথা হয়েছে তারা ভারতে যাওয়ার বিষয়ে কিছু বলেনি। রাতে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সকালে নদীতে তার লাশ পাওয়া যায়।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমদ জানান, আমরা লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠিয়েছি। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমরা শুনেছি তারা কয়েকজন ভারতে যাতায়াত করত। স্থানীয়রা জানিয়েছে শনিবার রাতেও তারা ভারতে গিয়েছিল।