ধীরগতিতে নামছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুন ২০২৪, ২:০০:৩০ অপরাহ্ন
গোয়াইনঘাটে ফের বাড়ছে * ছাতকে বিপদসীমা অতিক্রম * বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত
স্টাফ রিপোর্টার : বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সিলেটে নামতে শুরু করেছে পানি। ধীরগতিতে পানি নামায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে দুর্ভোগ। ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। রোববার ৩টি পয়েন্টে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শনিবারের তুলনায় সব পয়েন্টে পানি কমেছে।
তবে দ্ইু দিন কিছুটা কমে ফের গোয়াইনঘাটে বাড়ছে পানি। একই সাথে সুনামগঞ্জের দিরাই ও ছাতক পয়েন্টে সুরমার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোববার ছাতক পয়েন্টে সুরমার পানি বিপদসীমার ৫৩ সে.মি, উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দিরাই পয়েন্টে বিপদসীমার নিচে থাকলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে সিলেটের বন্যাকবলিত উপজেলায় পানি নামার সাথে দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ। আসবাবপত্রের পাশাপাশি ঘর-বাড়ী নির্মাণ ও সংস্কার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। বন্যায় যোগাযোগের রাস্তা বিধ্বস্ত হওয়ায় নির্মাণ সামগ্রী নিতে গিয়ে বাড়তি খরছের মুখে পড়ছেন সিলেটের ৫ উপজেলার বন্যা কবলিত বাসিন্দারা।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বেড়িবাঁধ ও চলাচলের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ৪ ইউনিয়নের জনসাধারণের যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্ধ রয়েছে ছোট বড় সকল ধরনের পরিবহন চলাচল। শনিবার সকালে উপজেলা সদরে সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের সামনের বেড়িবাঁধ ও পাকা রাস্তা ভেঙে গিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সিলেটের নদ-নদীগুলোতে বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসায় এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হওয়ার প্রভাব পড়েছে। এতে পানির স্তর নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দ্রুত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
জানা গেছে, ভারতের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির ওপর সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টি নির্ভর করছে। কারণ, ভারতের পাহাড়ি ঢলেই সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এ জন্য চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে। শনিবার দিবাগত রাতে সিলেটে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি শনিবার সন্ধ্যা ৬ টার তুলনায় ৪ সেন্টিমিটার কমেছে। রোববার সন্ধ্যা ৬টার তথ্য অনুযায়ী নদীর ওই পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ৪৪ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। এই নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। শনিবার সন্ধ্যায় নদীর ওই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছিল। তবে রোববার সন্ধ্যায় সেটি কমে ১০ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর ওই পয়েন্টে বিপদসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় পানি বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া সারি ও ধলাই নদের পানিও শনিবারের তুলনায় রোববার সন্ধ্যা ৬টায় কিছুটা কমেছে।
নদ-নদীর পানি কমে আসায় সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা। তাঁরা জানান, শনিবার রাতে হালকা বৃষ্টি হলেও এর প্রভাব পড়েনি। নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। পানি কিছুটা নামতে শুরু করেছে। আবার কিছু এলাকায় পানি স্থির অবস্থায় রয়েছে।
অন্যদিকে সিলেটে সকাল থেকে আকাশ মেঘলা থাকলেও সাড়ে ৫টার দিকে কিছু বৃষ্টি হয়েছে। নগরের যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছিল, সেসব এলাকার পানিও কিছুটা কমেছে। কোনো এলাকায় নতুন করে পানি বৃদ্ধি পায়নি।সুরমা নদীর পানি কমে গেলেও সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় এখনো পানি জমে আছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু রয়েছে। এর মধ্যে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৮০৬ জন বন্যার্ত অবস্থান করছিলেন। এর আগে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির কারণে লোকজন বাড়ি ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। উপজেলাগুলোয় ত্রাণসহায়তা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে দুটি করে নৌকা রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গোয়াইনঘাটে আবার বাড়ছে পানি :
আমাদের গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি জানান, বন্যার পানি শনিবার রাতে কমলেও রোববার থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে। ঘরবাড়ি ভেসে উঠলেও বন্যার ছোবলে ক্ষতবিক্ষত। নিম্নআয়ের মানুষের ঘরে নেই খাবার, নেই কাজ, বেকার অবস্থায় মানবেতর দিন কাটছে বানভাসী মানুষের। সরকারী ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় আক্রান্তরা অনেকেই বঞ্চিত রয়েছেন। বিধ্বস্ত রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। হাট বাজারে চলছে নিত্যপণ্যের উচ্চলম্ফ।
ডুবে যাওয়া ঘর বাড়ি ভেসে উঠলেও বসবাসের উপযোগী করতে চলছে নারী পুরুষের প্রাণান্তকর চেষ্টা। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে অনেকেই নিজ বাড়িতে ফিরছেন। রোববার থেকে আবার পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। বানভাসী লোকজন জানান, দুর্যোগের সময় উদ্ধার কার্যক্রম ছিল না। যে যেভাবে পারছে নিজ চেষ্টায় বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়ছে। উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ ২৯ মে থেকে পানিবন্দী হয়ে পড়েন। সরকারী হিসাবে ৪৩ হাজার পরিবার আক্রান্ত হলেও ত্রাণ সহয়তা অপ্রতুল।
আকষ্মিক বন্যার প্রথম আঘাতে বেশী আক্রান্ত হয় ১২নং সদর, সাবেক পূর্ব জাফলং ও আলীরগাঁও ইউপিবাসী। উপজেলার সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার নীচে রয়েছে। উপজেলা সদরের সাথে গ্রামবাসির সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় হাদারপার আহারকান্দি ডৌবাড়ি এলাকা থেকে ইঞ্জিন নৌকায় মানুষ চলাচল করছে। রোববার দুপুরে ইমরান আহমদ এমপি উপজেলা সদরে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট পরিদর্শন করেন। এসময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, ইউএনও ও পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়ছে মানুষ :
সিলেটে গেল ২৪ ঘন্টায় পানি কমায় আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। তবে সার্বিক পরিস্থিতির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।এদিকে, রৌদ্র উজ্জ্বল থাকায় পানি নামতে শুরু করেছে সিলেট নগরী, সিলেট সদর, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল থেকে।
রোববার সিলেটের জেলা প্রশাসন জানায়, বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড, সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন, জৈন্তাপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন, গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন, কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, জকিগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন, বিয়ানীবাজার উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার ২টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ডসহ জেলার বন্যা কবলিত ৮টি উপজেলার মোট ৬৮টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের ৭৬১টি গ্রাম ইতোমধ্যে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বন্যা আক্রান্ত জনসংখ্যা ৬ লাখ ৮ হাজার ৩৩৫ জন। যা শনিবার পর্যন্ত ছিলো ৬ লাখ ৯ হাজার ৩৩ জনে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এসব এলাকাগুলোতে ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে রোববার পর্যন্ত ১হাজার ৮শ ৬ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন, তবে শনিবার তার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩শ ৪২ জন। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারি- বেসরকারিভাবে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় গত ১২ ঘন্টায় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ২০৪ জন তাদের বাড়ি ফিরে গেছেন। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং সার্বিক পরিস্থিতির উপর সর্তক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
বিশুদ্ধ পানির সংকটে নগরের পানিবন্দী মানুষ :
নগর এলাকার পানিবন্দী মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নগরীর উপশহর, তেররতন, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ ও কাজিরবাজার এলাকার বাসিন্দারা এমনটি জানিয়েছেন।ভুক্তভোগীরা জানান, পানি কমলেও এখনো আমরা পানির মাঝে ভাসতেছি। না আছে খাওয়ার পানি, না আছে গোসলের পানি। বিশুদ্ধ পানির অভাবে রান্নাও করতে পারছি না ঠিকমতো। সিটি করপোরেশন মাঝে মধ্যে একটু পানি ছাড়ে। তখন হাটু পানি ভেঙে গিয়ে খাওয়ার জন্য পানি নিয়ে আসি। চার দিন ধরে এমন চলছে।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিসিকের পানির লাইন অনেক এলাকায় ডুবে থাকায় পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে শনিবার থেকে আমরা জলাবদ্ধ এলাকাগুলোর মানুষের মাঝে শুকনা খাবারের পাশাপাশি দুই লিটার করে পানি সরবরাহ শুরু করেছি।এই পানি পর্যাপ্ত নয় বলে জানান পানিবন্দী মানুষ। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য সিটি কর্পোরেশন ও নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তারা।
সিসিকের সেবা অব্যাহত :
সিলেট নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে বিভিন্নভাবে কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, বন্যা হওয়ার পর থেকে সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশনায় নানাভাবে কর্মতৎপরতা চালানো হয়। ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরানসহ কর্মকর্তাগণ বন্যা কবলিত এলাকায় পরিদর্শন করেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর ছিলেন।
তিনি আরও জানান, বন্যায় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বেশির ভাগ এলাকার। তাছাড়া বন্যার ঝুঁকিতে আছে এমন সকল ওয়ার্ডে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানি বাড়লে তাদের ওই আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হবে। সুরমা তীরবর্তী বিদ্যুৎ সাবস্টেশন গুলো রক্ষার জন্য বালির বস্তা দিয়ে বাধ নির্মাণ করা হয়েছে। ২৫ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর তাকবিরুল ইসলাম পিন্টু ও রায়হান আহমদের মাধ্যমে বাধ নির্মাণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, নগরীর ১৫নং ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী একটি ৫ তলা খালি ভবনে দুটি আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিসিকের স্বাস্থ্য শাখার একটি চিকিৎসক দল সেখানে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। তাছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এই দুটি আশ্রয় কেন্দ্রসহ বন্যা কবলিত ওয়ার্ডগুলোতে শুকনা খাবার, চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন ও কিছু কিছু ওয়ার্ডে মোমবাতি সরবরাহ করা হয়েছে। শনিবার বিকাল থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খিচুড়ি দেওয়া হয়েছে।
সাজলু লস্কর জানান, স্থানীয় কাউন্সিলর ও আমাদের নিজস্ব তথ্যমতে আনুমানিক চার হাজার পরিবার বন্যাকবলিত আছে। রোববার আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার আমাদের মাঝে মজুদ আছে।
দোয়ারায় রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন:
আমাদের দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বেড়িবাঁধ ও চলাচলের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ৪ ইউনিয়নের জনসাধারণের যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্ধ রয়েছে ছোট বড় সকল ধরনের পরিবহন চলাচল। শনিবার সকালে উপজেলা সদরে সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের সামনের বেড়িবাঁধ ও পাকা রাস্তা ভেঙে গিয়ে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, রাস্তাটি দীর্ঘদিন যাবত ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় তার সামনে একটি বেড়িবাঁধ দেওয়া হয়। ভারী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তাটি দিনদিন ঝুঁকিতে পড়ে। এতে শনিবার সকালে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রথমে বেড়িবাঁধ ভাঙে, পরে জনগুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি ও ভেঙে যায়। ফলে পরিবহন চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে সুরমা, লক্ষিপুর, বোগলাবাজার ইউনিয়নে জনসাধারণের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা সদরসহ আশপাশের এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে যেতে পারছেনা। শিক্ষার্থীরা না আসায় শনিবার কলেজে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়।
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল জানান, দোয়ারাবাজার সদর থেকে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ হয়ে রাস্তাটি উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র রাস্তা। দীর্ঘদিন যাবত সংস্কার না হওয়ায় রাস্তা দিয়ে যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে আসছে। শনিবার সকালে হঠাৎ ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে রাস্তাটি ভেঙে যায়। এতে এলাকাবাসীর চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও স্কুল কলেজে যেতে পারছেনা।
দোয়ারাবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এ এসএম নাইম জানান. ঢলের কারণে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় কলেজের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা আসতে না পারায় শনিবার পাঠদান বন্ধ ছিলো। তিনি দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার অনুরোধ জানান।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, সড়কটি আমরা পরিদর্শন করে এসেছি। খুব দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার উপযোগী করা হবে।