মালয়েশিয়াগামী শ্রমিক হয়রানি: দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুন ২০২৪, ৮:৩০:১৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (৩১ মে) বিএমইটি (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) থেকে ছাড়পত্র পেয়েও কমবেশি ১৬ হাজার ৯৭০ জন বাংলাদেশি কর্মীকে মালয়েশিয়া পাঠাতে পারেননি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। এমন পরিস্থিতিতে ঘটনাটি তদন্ত করে দায়ী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোমবার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করে তিনটি আদেশ দিয়েছে। অন্যদিকে, মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীদের দেশটিতে প্রবেশের জন্য সরকার চেষ্টা করছে বলে সোমবার জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
স্বপ্রণোদিত অভিযোগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উল্লেখ করে যে, মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন যে, তারা মালয়েশিয়ার ভিসা ও ছাড়পত্র পেয়েও কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর অগ্রহণযোগ্য কর্মকা-সহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে মালয়েশিয়া যেতে পারছেন না। জমি বিক্রি করে ও চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার টাকা জোগাড় করেও শেষ পর্যন্ত যেতে না পেরে তারা এখন নিঃস্ব। শেষ দশ দিনে বিমানের টিকিটের অজুহাতে ৫০ হাজার টাকা করে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রীর নিকট থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সক্রিয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর অবৈধ কর্মকা-ের কারণে মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের হয়রানি ও তাদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং সেই দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীরা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে জানা যায়। এতে চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে তাদের মানবাধিকার। কমিশন মনে করে, এ ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে অনতিবিলম্বে তদন্তপূর্বক প্রভাবশালী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ অভিযোগে উল্লিখিত শ্রমিকদের হয়রানির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করে তিনটি আদেশ দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ক) মালয়েশিয়ায় প্রবেশের শেষ সময়সীমাকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মে মাসের শেষ দশ দিনে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রীর কাছ থেকে বিমানের টিকিটের অজুহাতে মাথাপিছু অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা করে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সংক্রান্ত অভিযোগটি তদন্তপূর্বক দায়ী প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। খ) গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লিখিত ভিসা ও ছাড়পত্র পেয়েও যথাসময়ে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক মালয়েশিয়া যেতে না পারার পেছনে দায়ী প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ভিসা প্রাপ্ত শ্রমিকদের মালয়েশিয়া পাঠাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। গ) প্রতারণার মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায়পূর্বক নাম-সর্বস্ব কোম্পানিতে শ্রমিকদের প্রেরণ এবং মালয়েশিয়া যাওয়ার পর কাজ না পাওয়ার বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বলা হলো। এ বিষয়ে আগামী ১০ জুলাই প্রতিবেদনের জন্য ধার্য করা হয়েছে।
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সেমাবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীদের দেশটিতে প্রবেশের জন্য সরকার চেষ্টা করছে। এর আগে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, এমপি গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৩১ মে পর্যন্ত বিএমইটি থেকে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন মালয়েশিয়া গিয়েছেন। সেই হিসাবে ১৬ হাজার ৯৭০ জনের কম-বেশি যেতে পারেননি।