ছাতকে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুন ২০২৪, ৬:০৩:৪৬ অপরাহ্ন
ছাতক সংবাদদাতা : ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। টানা বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়। ঢলের কারণে ক্রমশ পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে সুরমা, চেলা ও পিয়ান নদীতে। বর্তমানে এ তিনটি নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। এভাবে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে প্রবল বন্যার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। রোববার রাতে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বটের খাল নদী, কাকুরা খাল নদী, বোকা নদী ও চিলাই খালে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলার দোলারবাজার-শরিষপুর ভায়া-ছৈলা সড়ক, কৈতক-হায়দরপুর সড়ক, আছাকাচর-শ্রীপুর সড়ক, জোড়াপানি-শারপিন নগর সড়ক, ফকির টিলা-নরসিংপুর সড়ক, ইসলামপুর-নোয়াকোট সড়ক, শ্যামপাড়া-কান্দিগাঁও সড়ক, নোয়ারাই-বালিউরা সড়ক, ছাতক জাউয়াবাজার সড়কসহ অনেকগুলো পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে ও তলিয়া যাবার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
উপজেলার ইসলামপুর, উত্তর খুরমা, নোয়ারাই, কালারুকা, চরমহল্লা, জাউয়াবাজার, সিংচাপইড় ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার হাওর, মাঠঘাট ও রাস্তায় বন্যার পানি ঢুকেছে। সীমান্তবর্তী ধনীটিলা, ছনবাড়ী বাজারে সড়কের উপর দিয়ে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার পানির প্রবল স্রোতে ভেঙ্গে গেছে এলাকার একটি সড়কের বিভিন্ন অংশ। প্লাবিত হয়েছে ইউনিয়নের হাদা, নোয়াকোট, রহমতপুর, বনগাঁও, দারোগা খালী, বৈশাকান্দি, ছনবাড়ী, ছৈদাবাদ, গণেশপুর গ্রাম। এসব গ্রামের অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। উত্তর খুরমা ইউনিয়নের রুক্ষা, গদারমহল, ঘাটপার, রাখা ফুরকান নগর, বিহাই, চলিতার বাক, ছাতক সদরের কান্দিগাঁও, কাজি হাটা, চরমহল্লা ইউনিয়নের কেজাউরা, হাসারু চরবাড়ুকা, চরমাধব, বল্লভপুর গ্রামের মানুষ পানিবদিী হয়ে পড়েছেন।
বন্যার পানিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আউশ-আমন ধানের বেশ কিছু বীজতলা, শাক-সবজীর বাগান তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত কোথাও কোন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। পানিবৃদ্ধির কারণে উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতসহ আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো কোন লোকজন উঠেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে বর্তমানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উত্তর খুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ জানান, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ, কালারুকা, দোয়ারাবাজার, দোলারবাজার সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে কানায় কানায় বন্যার পানি। গ্রামীণ বেশ কয়েকটি সড়ক তলিয়ে গেছে। একটু পানি বৃদ্ধি হলেই উপজেলা সদরের সাথে ১৩ টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ছাতক জাউয়াবাজার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এড. সুফি আলম সুহেল জানান, সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কা লাগে ইসলামপুর ইউনিয়নে। তিনি জানান, ইউনিয়নের সকল সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় আছেন। উপজেলা সদরের সাথে নৌ-যোগাযোগ ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
নোয়ারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালিক রাজা জানান, নোয়ারাই ইউনিয়ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলের একটি ইউনিয়ন। এখানে প্রচুর সবজি চাষ, ধান চাষ হয়ে থাকে। বন্যায় ইউনিয়নের প্রচুর সবজি বাগান ও বীজতলা তলিয়ে গেছে। ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন ইউনিয়নের হাজারো কৃষক।
বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফা মুন্না জানান, তিনি ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুতসহ সব প্রাথমিক প্রস্তুতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।