ধ্বংসস্তূপ গাজায় এখন যুদ্ধবিরতির প্রতীক্ষা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০২৪, ৭:৪৪:০৫ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসন থামছেই না। সেখানে এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৮২ হাজারের বেশি মানুষ। বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। নিরাপদ আশ্রয়, পানি আর খাবারের সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। নিরীহ ফিলিস্তিনিরা যেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে সেখানেই ইসরাইলি বাহিনীর হামলার শিকার হচ্ছে তারা। আশ্রয়হীন এসব মানুষ জানে না যে এখন তারা কোথায় যাবে। খবর আলজাজিরার।
এদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিশ্চিত করেছেন যে, হামাসকে এখন যে শর্তগুলো দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ইসরাইল প্রস্তুত। তিনি আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতার পুরো চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবরুদ্ধ রাফা শহরজুড়ে হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলি সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এ ছাড়া দক্ষিণ ও মধ্য গাজার বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ৩৬ হাজার ৫৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও ৮২ হাজার ৯৫৯ জন।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকা একটি যানবাহনে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পিআরসিএস জানিয়েছে, চলমান যুদ্ধে তাদের অন্তত ৩৩ জন সেবাকর্মী নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৭ জন সরাসরি মানবিক কাজে জড়িত ছিলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক ফোনকলে নেতানিয়াহুকে বলেছেন, গাজা হবে ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকেই গাজা উপত্যকায় সরকার পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে ইসরাইলের কট্টরপন্থি পুলিশ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী ইটামার বেন-গিভির এক ভিডিওবার্তায় লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে দেওয়া ওই বার্তায় বেন-গিভির বলেন, ‘সব হিজবুল্লাহকে পুড়িয়ে মারতে হবে, ধ্বংস করে দিতে হবে। যুদ্ধ!’ এরই মধ্যে ইসরাইলি বাহিনী মধ্য গাজার একটি শিবির দখল নিয়েছে। তারা বলছে যে, তাদের যুদ্ধবিমান হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং স্থলবাহিনী বুরেজ শিবিরের দখল নিয়েছে। বুরেজ হলো মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকার একটি শরণার্থী শিবির।
রাজনৈতিক কারণে গাজা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন নেতানিয়াহু : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে গাজা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে থাকতে পারেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন। মঙ্গলবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে। গত সপ্তাহে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এই প্রস্তাবের বিষয়ে নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। মন্ত্রিসভার একটি অংশ হুমকি দিয়ে বলেছে, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মানা হলে তারা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন।
সাক্ষাৎকারে বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল-তিনি কি মনে করেন যে, নেতানিয়াহু তার নিজের রাজনৈতিক কারণে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন? জবাবে বাইডেন বলেছেন, ‘মানুষের কাছে এই উপসংহার টানার প্রত্যেকটি কারণ রয়েছে।’ গাজায় ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইসরাইল মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে কি না তা ‘অনিশ্চিত’।
ইসরাইলি হামলায় গাজার অর্ধেক স্থাপনা ধ্বংস : ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় আট মাস ধরে চলা ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় সেখানকার ৫৫ শতাংশ বাড়িঘর, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্রের প্রাথমিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এ তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ সংস্থা ইউএনওএসএটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, ১ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি ভবন হামলার শিকার হয়েছে।
গত সোমবার স্যাটেলাইটে ধারণ করা চিত্রের ভিত্তিতে আনুমানিক এ হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর এবং ১৫ অক্টোবর তোলা চিত্রের সঙ্গে তুলনা করে ক্ষয়ক্ষতির এ হিসাব প্রকাশ করা হয়। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালায়। জবাবে ওই দিন থেকেই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী।
বিবৃতিতে ইউএনওএসএটি বলেছে, স্যাটেলাইট চিত্রে একেবারে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ৩৬ হাজার ৫৯১টি অবকাঠামো শনাক্ত করা হয়েছে। ১৬ হাজার ৫১৩টি অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হালকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৮টি অবকাঠামোর। এ ছাড়া আরও ৩৬ হাজার ৮২৫টি অবকাঠামো কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এবং গাজার উত্তরাঞ্চল।
এর আগে গাজায় চলমান যুদ্ধের ইতি টানতে নতুন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। হামাস এতে রাজি থাকলে ইসরাইলও মেনে নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন করবি এ কথা জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনাটি তুলে ধরেন।
সেখানে বলা হয়েছে, মোট তিন ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে। এর প্রথম ধাপ শুরু হবে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে। সে সময়ে গাজার জনবহুল এলাকা থেকে ইসরাইলি সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়া হবে, দেওয়া হবে মানবিক সহায়তাও। একই সঙ্গে হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে বন্দি এবং জিম্মি বিনিময় হবে বলেও পরিকল্পনায় বলা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবে ইসরাইল রাজি হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশা প্রকাশ করলেও ইসরাইলের মন্ত্রিসভার কয়েক সদস্য ইতিমধ্যেই এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি এমন এক সময়ে দেওয়া হলো যখন ইসরাইলের সামরিক বাহিনী গাজার রাফা শহরে বিমান হামলা জোরদার করেছে।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর দেওয়া তথ্যমতে, হামলার মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার পর রাফার ৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের সবগুলো এখন খালি পড়ে আছে। একই সঙ্গে হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে বন্দি এবং জিম্মি বিনিময় হবে বলেও পরিকল্পনায় বলা হয়েছে।