চতুর্থ ধাপেও ভোটার খরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০২৪, ৯:২৬:০৩ অপরাহ্ন
ইসির দাবি ভোটের হার ৩৪.৩৩
স্টাফ রিপোর্টার : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপও ভোটার খরায় শেষ হলো। সিলেটের ৭টিসহ ৬০ উপজেলার প্রতিটিতেই ছিলো কম ভোটার। বিএনপি-জামায়াত এর বর্জনের এ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে অলস সময় পার করেছেন দায়িত্বরতরা। কম ভোটারের নির্বাচনেও বিভিন্ন স্থানে জাল ভোট, প্রভাব বিস্তারসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে আমেজহীন এ নির্বাচনের অধিকাংশই ছিলো শান্তিপূর্ণ।
বুধবার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। দুপুরে নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম ৬০ উপজেলায় প্রথম চার ঘণ্টায় ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান।এরপর দিনের শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল দাবি করেন, চতুর্থ ধাপে ৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।এর আগে ইসির দাবি অনুযাযী, প্রথম ধাপে ৩৬ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৩৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ভোটের হার ৩৫ শতাংশ।
এদিকে, গতকাল চতুর্থ ধাপে সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট দুই উপজেলায় বন্যা ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ চলে। সকাল থেকে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।
জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বারহাল ইউনিয়নের কোনাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ৫ নম্বর কক্ষে প্রথম পৌনে দুই ঘণ্টায় কোনো ভোট পড়েনি। অন্য কক্ষগুলোতেও বেশ ধীরগতিতে ভোট পড়ে। ভোটের এমন পরিস্থিতির জন্য প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও প্রার্থীরা জকিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতিকে দায়ী করেন।
বুধবার সকালে কোনাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ ভোটারদের কক্ষের সামনে পাঁচ থেকে ৬ জন দাঁড়ানো। নারী ভোটারদের কক্ষের সামনে ২ জন ছিলেন। কেন্দ্রের ৪ নম্বর কক্ষটি নারী ভোটারদের জন্য। ওই ভোটকক্ষে ভোটার আছেন ৫২০ জন। সকাল ৮টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত ওই কক্ষে ভোট দিয়েছেন ১২ জন। কক্ষটির পাশেই ৪ নম্বর ভোটকক্ষ। সেখানে প্রেমনগর গ্রামের ভোটার আছেন ১৩১ জন। কিন্তু সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত ওই কক্ষে কেউ ভোট দিতে আসেননি। নারীদের ৬ নম্বর ভোটকক্ষে নোওয়াগ্রামের ২৭৪ জন ভোটার আছেন। ওই কক্ষে পৌনে দুই ঘণ্টায় ভোট পড়ে ছয়টি।
এছাড়া প্রেমনগর গ্রামের পুরুষ ভোটারদের ২ নম্বর কক্ষে পৌনে দুই ঘণ্টায় ভোট পড়ে দুটি। এর বাইরে পুরুষদের ভোটকক্ষ ১ ও ৩ নম্বরে ভোট পড়েছে ৭৮টি।এসময় এক বৃদ্ধ ভোটার বলেন, জীবনে তো বহু ভোট দিছি। এবারকার ভোট একেবারেই আমেজহীন। ওই ভোটারের মতো এক ও অভিন্ন কথা অসংখ্য ভোটারের।জকিগঞ্জের এই কেন্দ্রগুলোর মতো অভিন্ন চিত্র সিলেটের সাত উপজেলার প্রায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে। তবুও অনুষ্ঠিত হয়েছে ভোটগ্রহন।
জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মরতুজা আহমদ বলেন, উপজেলার ৭৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টিতে বন্যার পানি আছে। উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী। এ অবস্থায় নির্বাচন পেছানোর জন্য তিনি আবেদন করেছিলেন। তবে সেটি কার্যকর করা হয়নি।সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত রয়েছে। এ উপজেলার ১১৩টি গ্রাম এখন পর্যন্ত প্লাবিত রয়েছে। এসব এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ১৪৭ জন। উপজেলার ৫৫ আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০৮ জন মানুষ অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে কানাইঘাট উপজেলাতেও পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত রয়েছে। বন্যায় এই উপজেলায় ১৯০টি গ্রাম এখনও প্লাবিত। এসব এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা ৮০ হাজার ৬১০ জন। বুধবার পর্যন্ত ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪১ জন অবস্থান করছেন।
এদিকে, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলায়ও ভোটারের খরা দেখা গেছে। সকালে মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা ইউনিয়নের ডাঃ মহি উদ্দিন হাই স্কুল এন্ড কলেজে এমন চিত্র দেখা যায়। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় পার হলেও ওই কেন্দ্রের মহিলা ২নং বুথে একটি ভোটও পড়েনি। এই বুথে মোট ভোট সংখ্যা ২৮১ টি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অলস সময় পার করছেন।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। ভোটারদের উপস্থিতি এখনো বাড়ে নাই। মাঝেমধ্যে এক দু’জন ভোটার এসে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন। এদিকে, জকিগঞ্জে জাল ভোট দিতে এসে দ-প্রাপ্ত হয়েছেন এক যুবক। বুধবার বিকাল ৩টার দিকে সুলতানপুর নয়াগ্রাম হাজী তৈয়ব আলী বালিকা দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
জকিগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন কেন্দ্রে টানটান উত্তেজনা ছিলো। উপজেলার উত্তরকুল ভোটকেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী লোকমান উদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন প্রতিদ্বন্দ্বিপ্রার্থী মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরানের এজেন্ট মাওলানা জাকারিয়া আহমদের মাথা ফাটানোর অভিযোগ যায়।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের একটি কেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাগ্বিতন্ডা হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বুলচান্দ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধের দাবি জানান চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা। এরকম নানা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও ভোটার খরায় শেষ হলো ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপ।