হামাসের রণকৌশলে পরিবর্তন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুন ২০২৪, ৯:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে নিজেদের যোদ্ধা বাহিনীর অর্ধেক সদস্য হারিয়েছে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস।ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, গত ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর আগে হামাসের সামরিক শাখায় ছিল ২০ থেকে ২৫ হাজার যোদ্ধা। আট মাস পর বর্তমানে গোষ্ঠীটির যোদ্ধা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা নেমে এসেছে ৯ থেকে ১২ হাজারে। মার্কিন ও ইসরাইলি কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী, এই সময়সীমায় অবশ্য ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিহত হয়েছেন, তবে তাদের সংখ্যা মাত্র ৩০০ বা তার কিছু বেশি।
রয়টার্স ওই কর্মকর্তাদের বরাতে বলেছে, জনবল কমে যাওয়ায় এখন রণকৌশলে পরিবর্তন এনেছে গোষ্ঠীটি। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন আর সরাসরি সম্মুখ সমরে আসছেন না হামাস যোদ্ধারা। তার পরিবর্তে তারা অ্যামবুশ এবং ইম্প্রোভাইজড বোমার ওপর নির্ভর করছেন বেশি।
এসব ব্যাপারে হামাসের মন্তব্য জানতে সমর্থ হয়নি রয়টার্স। গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদেরও অনেকে রয়টার্সকে বলেছেন, হামাসের এই কৌশল পরিবর্তনের ব্যাপারটি নজরে পড়েছে তাদেরও। গাজার বাসিন্দা ওয়াসিম ইব্রাহিম বলেন, ‘যুদ্ধের প্রথম দিকের মাসগুলোতে হামাসের যোদ্ধারা মুখোমুখি যুদ্ধে নামতেন, হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি অনেক সময় ইসরাইলি বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্যও করতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইসরাইলি বাহিনী আসছে-এমন খবর পাওয়ামাত্র তারা তৎপর হতেন।’
ওয়াসিম আরও বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে হামাস যোদ্ধাদের রণকৌশলে পরিবর্তন এসেছে। এখন তারা ইসরাইলি বাহিনীকে রণক্ষেত্রে প্রবেশ করতে দেয় এবং মুখোমুখি সংঘাতের পরিবর্তে অ্যামবুশ ধরনের হামলা চালায়।’
মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা, মুখে যা-ই বলুক, হামাস এই যুদ্ধ আরো দীর্ঘায়িত করতে চায়। এ কারণে তারা এই কৌশল নিয়েছে।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যোদ্ধাদের সংখ্যা কমলেও আপাতত অস্ত্র-গোলাবারুদের অভাবে ভুগছে না হামাস। গোপন সুড়ঙ্গ ও অন্যান্য চোরাপথে তাদের কাছে অস্ত্র আসছে।’
এই ইস্যুতে আরও তথ্য জানতে হামাসের মুখপাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, তবে তাদের কেউই কথা বলতে রাজি হননি। মার্কিন ওই কর্মকর্তার অনুমান যদি সত্যি হয়, সেক্ষেত্রে যে ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে তা হলো- গাজায় দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায় ইসরাইল ও হামাস উভয়ই। কারণ গত সপ্তাহে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জাশি হানেগবি বলেছিলেন, ২০২৪ সাল শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই।
মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন, হামাস যে কৌশল নিয়েছে, তাতে সীমিত জনবল নিয়ে আরও কয়েক মাস যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে গোষ্ঠীটি। গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরাইল সীমান্তে হামাস যোদ্ধাদের অতর্কিত হামলা এবং সেখানকার ভূখ-ে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অন্তত ১ হাজার ১৩৯ সামরিক-বেসামরিক লোককে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই যুদ্ধ। হত্যার পাশাপাশি অন্তত ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা। অতর্কিত এই হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী, যা এখনও চলছে। ভয়াবহ এই অভিযানে গাজায় ৩৬ হাজার ৬শরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন; নিহতদের ৫৬ শতাংশই নারী এবং শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি।