বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, শর্তসাপেক্ষে খুলল পর্যটনকেন্দ্র
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুন ২০২৪, ৯:৫৬:৫০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির। কুশিয়ারার ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্ট ছাড়া জেলার সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে আছে। তাই ৭ দিন বন্ধ রাখার পর পর্যটনকেন্দ্রগুলো শর্তসাপেক্ষে খুলে দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার থেকে পর্যটনকেন্দ্রে শর্ত সাপেক্ষে যাওয়া যাচ্ছে। সকাল থেকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। এরপর দুপুরের পর থেকে বিছানাকান্দি, রাতারগুল, শ্রীপুর, জাফলং পান্থুমাই, মায়াবী ঝর্ণাসহ সহ অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রও খুলে দেওয়া হয়।
জাফলংয়ের পিয়াইন নদীর পানির স্রোত ও গভীরতা বেশি থাকায় সাঁতার না জানা এবং যাদের বয়স ১২ বছরের কম তাদের নিয়ে জাফলং ট্যুরিস্ট স্পটে নৌকা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পর্যটনকেন্দ্রগুলো শর্ত সাপেক্ষে খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পর্যটকবাহী নৌকা চড়া ও পানিতে নামার সময় পর্যটকদের লাইফ জ্যাকেট পরতে হবে। জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে প্রায় সব কটি উপজেলা বন্যাকবলিত ছিল। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিলেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শুধু জকিগঞ্জ উপজেলায় কয়েকজন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। অন্যরা বাড়িঘরে ফিরেছেন। আর বৃষ্টি বা ভারতীয় ঢল না নামলে বন্যা কবলিত এলাকা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।
বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় গত ৩০ মে সিলেটের সব কটি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ৩১ মে থেকে সিলেটের সবকটি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ৭ দিন পর শুক্রবার থেকে ফের পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে পর্যটক স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম।
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে বন্ধ করা পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নৌকায় লাইফ জ্যাকেট থাকতে হবে।
এদিকে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় উপজেলা ও নগরের আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজন বাড়ি ফিরছেন। সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ঢলের পানি যাতে দ্রুত নেমে যায়, সে জন্য নগরের অভ্যন্তরের ছড়া-খালগুলোতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছে।
তবে নগরীর কিছু এলাকার বাসাবাড়ি থেকে পানি নামলেও নিম্নাঞ্চলে এখনও সমস্যা রয়ে গেছে। সব জায়গায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে নগরীর কিছু এলাকায় বাসিন্দাদের নাকে রুমাল দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। ময়লা পানি মাড়িয়ে অনেকে বাসাবাড়ি থেকে বের হচ্ছে। বিশেষ করে সেপটিক ট্যাঙ্কের ময়লার দুর্গন্ধে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজনের নাভিশ্বাস উঠছে। ময়লা ও নোংরা পানির দুর্গন্ধে পানিবাহিত সংক্রামক রোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সিসিক সূত্র জানায়, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডে ২০টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭টি কেন্দ্রে কাউকে পাওয়া যায়নি। অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতে অল্প সংখ্যক মানুষ আছেন । তবে সিটি করপোরেশনের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হয়নি। পানি বৃদ্ধি পেলে সেগুলোতে ফের আশ্রয় নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার; সেখানে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ৯ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছিল। তবে সুরমা-কুশিয়ারার অন্যান্য পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সিলেটের নদ-নদীর পানিগুলো পূরিপূর্ণ থাকায় পানি ধীরগতিতে নামছে। নতুন করে কোথাও পানি বৃদ্ধি পায়নি।এদিকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি না হওয়ায় নতুন কারে পাহাড়ি ঢল নামেনি। সিলেটেও বৃষ্টি হয়নি। ফলে পানি দ্রুত নামছে।
শুক্রবার দিনভর সিলেটের আকাশ ছিলো রোদের আলোয় ঢাকা। তবে বৃষ্টিহীন সিলেটে অস্বস্থিও বেড়েছে। কারণ তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।