সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো জলমগ্ন সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুন ২০২৪, ১২:১০:৩২ অপরাহ্ন
দখল ও অদূরদর্শী ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা
মুনশী ইকবাল: সপ্তাহ না ঘুরতেই আবার ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন হলো সিলেট নগরী। তবে এবার পাহাড়ি ঢল বা নদীর পানির জন্য নয়, ড্রেন-নালা-খাল দিয়ে পানি বের হয়ে যেতে না পেরেই এই জলাবদ্ধতা। এর আগে গত ২ জুন রাতে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরজুড়ে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় শনিবার রাতে আবার ডুবল সিলেট।শনিবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এ বৃষ্টিতে ডুবে যায় সব রাস্তাঘাট। সব জায়গায় হাঁটু পানি, কোথাও কোমরসমান পানি দেখা দেয়। রাস্তা ছাপিয়ে পানি বাসাবাড়িতে ঢুকে যাওয়ায় লোকজনের ভোগান্তির সীমা ছিল না। হিসাবের বৃষ্টি তিন ঘণ্টা হলেও মূলত ভারী বৃষ্টি হয় রাত এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে। আর এই একঘণ্টার বৃষ্টিতে এমন জলদুর্ভোগে দুশ্চিন্তায় নগরবাসী। বৃষ্টি হলেই এখন ঘরে পানি যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বারোটার দিকে বৃষ্টি থেকে গেলে দুই ঘণ্টার মধ্যে অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে যায়।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মাত্র ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে রাত ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ২শ ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বাসাবাড়ি ছাড়ও বৃষ্টির পানি ঢুকেছে সিলেট ওসমানী মেডিকেলসহ বিভিন্ন দোকাটপাটে। মুহূর্তে অনেক দোকানে পানি ঢুকে যাওয়ায় চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া তাদের কিছুই করার থাকেনি।এদিকে রাতে সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের দরগামহল্লা, পায়রা, চৌহাট্টা, দাঁড়িয়াপাড়া, জিন্দাবাজার, হাওয়াপাড়া, কাজলশাহ, মেডিকেল রোড, ঘাসিটুলা, বাগবাড়ি, কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া, সোবহানীঘাট, উপশহর, যতরপুর, তেরোরতন, সোনারপাড়া, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘিরপার, পাঠানটুলা, মিয়া ফাজিলচিশত, জালালাবাদ, হাউজিং এস্টেট, শাহি ঈদগাহ, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, জামতলা ও তালতলা এলাকায় পানি থইথই করছে। ঘরমুখী মানুষেরা যানবাহনের অভাবে পানি মাড়িয়ে হেঁটেই ফিরছিলেন।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা বলেন, পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে গত ২৯ মে মধ্যরাত থেকে সিলেটের ১০টি উপজেলা ও নগরে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তবে পানি নামতে শুরু করায় কয়েক দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। তবে নগরীর অদূরদর্শী ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ঠিকমতো পরিষ্কার না করা এবং ড্রেন-ছড়া দখলের ফলে পরিত্রাণ মিলছে না নগরবাসীর। ফলে ২/৩ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টি হলে নগর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও খাল দিয়ে পানি নদীতে মিশতে পারছে না। এ কারণে শনিবার মূলত ঘণ্টাখানেকের ভারী বৃষ্টিতে নগর জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা এনাম এরশাদ আলী জানান, বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটুপানি আর টানা আধাঘণ্টা ভারী বৃষ্টিতে ঘরে পানি এটা আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই এলাকায় এরকম কোনোদিন ছিল না। একটা সময় আমরা উপশহর, দক্ষিণ সুরমা ইত্যাদি এলাকায় বৃষ্টি হলে পানি জমার খবর শুনতাম কিন্তু বিগত তিন বছর থেকে আমাদের দাঁড়িয়াপাড়ায়ও তাই দেখছি। জল্লা ভরাট করে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পর থেকে এই সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। এরশাদ জানান, ভারী বৃষ্টিতে বসত ঘরে পানি চলে আসে, দোকানপাটে পানি ঢুকে যায়। যদিও বৃষ্টির পরিমাণ কমলে পানি বেশিক্ষণ থাকেনা কিন্তু যতটুকু সময়ের জন্য ঢুকে তাতেই তো সর্বনাশ করে দিয়ে যায়। পানিতে ভিজে আসবার নষ্ট হচ্ছে, ময়লায় ঘর নোংরা হচ্ছে। এগুলো পরিষ্কার করা এক যন্ত্রণা। পরিষ্কার করার পর আবার যদি বৃষ্টি শুরু হয় তবে আবারও পানি উঠবে এই শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়।
এনাম বলেন বক্স ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে কিন্তু পানি যাওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া বিভিন্ন দোকান তাদের সুবিধার জন্য রাস্তা থেকে ফুটপাতে সিমেন্ট ঢালাই দিয়ে স্লুপ তৈরি করে নেন। এতে রাস্তায় জমা পানি নামতে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সিটি কর্পোরেশনের চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ সংশ্লিষ্টদের ছবি তুলে এসব সমস্যার কথা জানিয়েছি কিন্তু তারা এতে কোনো গুরুত্ব দেননি।
একটু ভারী বৃষ্টিতে পানিবন্দীতে ক্ষোভ প্রকাশ করে নগরীর একাধিক বাসিন্দা অদূরদর্শী এবং দুর্নীতিগ্রস্থ উন্নয়ন কাজকে দায়ী করেছেন। নগরীর মিরাবাজারের বাসিন্দা জায়েদ আহমদ বলেন শনিবার রাতে নাইওরপুল থেকে শিবগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তা দেখে মনে হয়েছে বড়ো কোনো ছড়া বা নদী। এত উন্নয়নের পর মাত্র আধাঘণ্টা পৌনে একঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে এরকম কেন হবে? তিনি বলেন সিসিক যখন রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে থেকে শিবগঞ্জের দিকে ড্রেনের কাজ করে তখন দেখা যায় জায়গায় ড্রেন ভেঙে জায়গায়ই একইরকম করে আবার করা হচ্ছে। এখানে তারা ড্রেন বড়ো কেন করলো না? আর একই রকম করতে চাইলে ভাঙার কী দরকার ছিল? এটা স্রেফ দুর্নীতি। এর তদন্ত প্রয়োজন।