ক্রেতাশুন্য কাজিরবাজার : চলছে প্রস্তুতি !
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুন ২০২৪, ২:১৪:৪১ অপরাহ্ন
নগরে ৮ অস্থায়ী হাট চালু কাল
এমজেএইচ জামিল : মধ্যখানে বাকী ৪ দিন। এরপরই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের সময় ঘনিয়ে এলেও এখনো জমে উঠেনি প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের কোরবানির পশুর হাট। নগরীর একমাত্র স্থায়ী পশুর হাটে এখনো মাটি ভরাটসহ চলছে সংস্কার কাজ। বাজারের বেশীর ভাগ অংশে পশুর সমাগম ঘটলেও হাটে নেই ক্রেতা। তবে শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা জমার আশায় বসে আছেন পাইকাররা।
নগরীর প্রধান ও একমাত্র বড় পশুর হাট কাজিরবাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট-বড় বাহারি রংয়ের গরু নিয়ে বসে আছেন পাইকাররা। সাথে ছাগল-ভেড়ারও সমাগম রয়েছে বাজারে। কিন্তু ক্রেতা কম। যারা আসছেন গরু দেখে দরদাম করেই চলে যাচ্ছেন। বিক্রি নেই বললেই চলে। এরই মধ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আরো ৮টি অস্থায়ী হাট বসানোর কাজ চলছে। ১৩ জুন থেকে এসব স্থানে বসবে অস্থায়ী পশুর হাট।
সিসিক সূত্র জানা গেছে, ১৩ জুন থেকে ৫ দিন মহানগর এলাকার টুকেরবাজার (তেমুখী পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা), মাছিমপুর কয়েদির মাঠের খালি জায়গা, মেজরটিলা বাজার-সংলগ্ন খালি জায়গা, শাহপরাণ পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা, টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা, শাহী ঈদগাহস্থ খেলার মাঠের পেছনের অংশ, সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন এস ফল্ট মাঠ ও দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার থানাধীন ট্রাক টার্মিনালে কুরবানির অস্থায়ী পশুর হাট বসবে।
এদিকে মঙ্গলবার সরেজমিনে কাজিরবাজার পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু নিয়ে এসেছেন পাইকারিরা। সামিয়ানার নিচে যত্নে রাখা হয়েছি সারি সারি গরু। এর বাইরেও রয়েছে ছাগল-ভেড়া। একেক জন পাইকারী বিক্রেতা ৫০ থেকে ১০০ গরু তুলেছেন বাজারে। কিন্তু তার মধ্যে পাঁচ থেকে সাতটি ছাড়া বিক্রি তেমন নেই। কেউ কেউ এখনো একটিও বিক্রি করতে পারেন নি।
বিক্রেতারা বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে গরু নিয়ে আসার অন্যতম উদ্দেশ্য বেশি বিক্রি। কিন্তু এবার বাজারের অবস্থা খুবই বেহাল। অবশ্য শেষ সময়ে বিক্রি বাড়বে এমন প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।
কাজিরবাজারের গরু বিক্রেতা আব্দুল রশিদ বলেন, এই হাটে স্থানীয় প্রায় ৮০ জন এবং বাইরে দুই শতাধিক পাইকারি গরু নিয়ে এসেছেন বাজারে। এবার গরুর দাম মোটামুটি ভাল। পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এবার পশুর দাম তুলনামূলক বেড়েছে।
বিক্রেতা মো. আব্দুর রব বলেন, কুষ্টিয়া থেকে সিলেটে গরু নিয়ে আসেন ২দিন আগে। কিন্তু এখনো বিক্রি নেই বললেও চলে। অবশ্য অন্যান্য বছর এমন সময় প্রায় অর্ধেক গরু বিক্রি করে ফেলেন। অথচ এবার মাত্র ছয়টি গরু বিক্রি করেছেন। ক্রেতা নাই দেখে লোকজন দামও কম হাঁকাচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে গরু নিয়ে আসা নগরের দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা ময়না মিয়া ফজল মিয়া বলেন, সিলেটে ঈদের হাটে শেষ সময়ে পশু বিক্রি বাড়ে। দামও পাওয়া যায় ভালো। নিজের টাকার জরুরী প্রয়োজন তাই ১০টি গরু নিয়ে এসেছি। ২দিন থেকে হাটে আছি কিন্তু এখনো একটিও বিক্রি হয়নি।
ছাগল বিক্রেতা জামাল মিয়া বলেন, গত একযুগ ধরেও বাজারের এমন মন্দাভাব আর দেখিনি। শেষ মুহূর্তে বাজার জমে উঠবে আশা প্রকাশ করছেন তিনি। এবার ৫০টি ছাগল নিয়ে হাটে এসেছেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কাজিরবাজার পশুর হাটের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন লোলন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, হাটের মূল অংশে অনেক পশুর সমাগম ঘটেছে। হাটের শুরুর দিকে কিছু জায়গা প্রস্তুতকরণ কাজ চলছে। এখনো বাজার জমে উঠেনি। শুক্রবার থেকে হাট পুরোদমে জমে উঠবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, শহরের অনেক মানুষ আছেন শেষ সময়ে পশু কিনে থাকেন। কারণ আগে কিনে রাখার জায়গা, খাবার সংগ্রহ ও পরিচর্যার বিষয়টি মাথায় রেখেই অনেক কুরবানীদাতা শেষ দিকে পশু ক্রয় করেন। সিটি কর্পোরেশন থেকে ৮টি অস্থায়ী হাটের অনুমতি মিলেছে বলে শুনেছি। এর বাইরে অবৈধ হাট না বসলে বিক্রেতা এবং ক্রেতা উভয়েই লাভবান হবে। কিন্তু শেষ দিকে পুরো নগরী হাটে পরিনত হলে অনেক পাইকার পশু নিয়ে শহরে আসতে ভয় পান। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইখতেখার আহমেদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে নগর এলাকায় ৮টি অস্থায়ী পশুর হাট প্রস্তুতকরণের কাজ চলছে। বর্তমানে ইজারা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব স্থানে বৃহস্পতিবার থেকে পশু বিক্রি শুরু হবে। এর বাইরে যাতে কোনো হাট কেউ বসাতে না পারে, সেদিকে সিসিকের বিশেষ দৃষ্টি থাকবে।
এদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের এক জরুরী সভায় সোমবার মেয়র আনোরুজ্জামান কঠোর হুশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, অনুমতিপ্রাপ্ত অস্থায়ী হাট ব্যতিত নগরীর অন্য কোথাও অবৈধ পশুর হাট বসতে দেয়া হবেনা। কেউ অবৈধ হাট বসানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।