মসলার ঝাঁজে গরম ঈদবাজার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২৪, ১২:৪০:০৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : আর একদিন পরেই কোরবানি ঈদ বা ঈদুল আজহা। তবে খুশির ঈদে বরাবরের মতো এবারো দু:খ ভর করেছে। কোনভাবেই স্বস্তি দিচ্ছেনা মসলাজাতীয় পণ্যের বাজার। ঈদ সামনে রেখে বাজার এখন বেশ চড়া। গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে এলাচি, জিরা, আদা, রসুন ও পেঁয়াজের মতো পণ্যের দাম অনেকটাই বেড়েছে। কোরবানি এলে সাধারণ মসলা পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সঙ্গে বাড়ে দামও। বেশ কিছু মসলার দাম গত কোরবানির আগের দামের তুলনায় এখন বেশি। গতকাল বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা মূল্যবৃদ্ধির জন্য মূলত দুটি কারণকে দায়ী করেছেন। তাদের মতে, এই দুই কারণ হলো, বিশ্ববাজারে কিছু মসলা পণ্যের বাড়তি দাম এবং দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত মে মাসে ডলারের মধ্যবর্তী দাম নির্ধারণ করে ১১৭ টাকায়। সে সময় ডলারের দাম একবারেই বাড়ে ৭ টাকা। আমদানিকারকেরা বলছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ বেড়ে গেছে।
দাম বাড়ায় সবচেয়ে এগিয়ে এলাচি। মাসখানেক আগে প্রতি কেজি ছোট এলাচি বিক্রি হতো ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে এখন তা বেড়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর কোরবানির আগে ছোট এলাচির দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম প্রায় দেড় গুণের বেশি বেড়েছে।
অন্যদিকে বড় আকারের এলাচির দাম আরেকটু বেশি। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি তা সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, ভারত ও গুয়াতেমালায় এলাচির উৎপাদন কম হওয়ায় দেশ দুটিতে পণ্যটির দাম বেড়েছে। এছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবও দেশের বাজারে এলাচির মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে।
কোরবানির সময় দারুচিনির চাহিদাও বেশ বাড়ে। বর্তমানে বাজারে দারুচিনির কেজি ৫৬০ থেকে ৬০০ টাকা। এক মাস আগেও যা কেজিতে ৫০ টাকা কম ছিল। আর গত বছর কোরবানির আগে দারুচিনি বিক্রি হয়েছিল ৪৬০-৫২০ টাকা কেজি দরে।
অন্যান্য মসলা পণ্যের মধ্যে বর্তমানে প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭৬০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়। গত কোরবানির আগে এর দাম কেজিপ্রতি ২০০-৪০০ টাকা কম ছিল। ধনিয়ার কেজি এখন ২৪০ থেকে ৩৬০ টাকা। বছরখানেক আগে যা ছিল ১৩০-১৬০ টাকা। প্রতি কেজি তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকা। এক মাসে এই পণ্যের দাম ৫০ টাকার বেশি বেড়েছে। গত বছর এ সময় তেজপাতার দাম ছিল ১২০-১৫০ টাকা। এ ছাড়া জয়ত্রী ৪ হাজার টাকা, জয়ফল দেড় হাজার টাকা, কাজুবাদাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা ও কাঠবাদাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে এই পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে।
টিসিবির হিসাবে, গত বছর কোরবানির আগে প্রতি কেজি জিরা ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এক মাস আগের তুলনায় অবশ্য জিরার দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এক মাসে আগে জিরার দাম বর্তমানের তুলনায় কেজিতে ৩০-৫০ টাকা কম ছিল।
পেঁয়াজ-রসুন-আদাও বাড়তি :
বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৬৫-৭৫ টাকা। গতকাল বাজারভেদে ৮৫-৯০ টাকা কেজি দরে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের কোরবানির আগের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০-৪০ টাকা বেড়েছে।
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানেই দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের রসুনের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। গতকাল বাজারভেদে দেশি রসুন ২১০-২৩০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ২২০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আরেক মসলাপণ্য আদার দামও কেজিতে ৪০-৬০ টাকা বেড়েছে। গতকাল আমদানি করা আদা বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩৪০ টাকা দরে। দেশি আদার দাম আরও বেশি।
বিস্ময় প্রকাশ করে এক ক্রেতা বলেন, আদার দাম ৩০০ হয়ে গেলো! রসুন-পেঁয়াজের দামও বেশি। ব্যবসায়ীরা খালি উপলক্ষ খোঁজে। এখন ঈদের সময়, তাই দাম বাড়িয়েছে।