নামে বেনামে পশুর হাট জমে উঠেছে বেচাকেনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২৪, ৯:০০:০৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র ২ দিন। এর মধ্যে নগরীর স্থায়ী ও অনুমোদিত অস্থায়ী হাটগুলোতে জমে উঠেছে পশুর বেচাকেনা। প্রতিবারের মতো এবারও চাহিদা বেশি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর। পিছিয়ে নেই ছাগল ও ভেড়া। এগুলো মাঝারি আকারের বিক্রি হচ্ছে। এবার দেশি গরু বেশী থাকলেও বাজারে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় গরু। নগরে ৮টি অস্থায়ী হাটের অনুমতি থাকলেও এবারো নামে বেনামে হাট বসিয়ে চলছে বেচাকেনা। ফলে অনেক ব্যবসায়ী গরু নিয়ে বৈধ হাটে যেতে পারছেন না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থায়ী ও বৈধ অস্থায়ী হাটের ইজারাদাররা।
এদিকে অবৈধ হাট নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মেট্রোপলিটন পুলিশকে দায়িত্ব দিয়ে দায় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। অপরদিকে অবৈধ হাটের কারবারি ও আর পুলিশের মধ্যে রীতিমত চোর পুলিশ খেলা চলছে। অবৈধ হাট উচ্ছেদে পুলিশের পক্ষ থেকে একশন নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। পুলিশের অভিযোগ- তারা তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে দেয়ার পর আবারো নগরীর আনাচে কানাচে পাইকারদের গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে খোদ পুলিশ প্রশাসন।
শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর কানিশাইল, সুবিদবাজার, পাঠানটুলাসহ বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে বসেছে অবৈধ পশুর হাট। ফলে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। দুর্ভোগে পড়ছেন জরুরী কাজে বাসার বাইরে বের হওয়া জনসাধারণ।
এবার ঈদুল আযহায় সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা ও নগর এলাকায় ৫১টি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে নগরে ৮টি ও জেলায় ৪৩টি। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগর এলাকার টুকেরবাজার (তেমুখী পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা), মাছিমপুর কয়েদির মাঠের খালি জায়গা, মেজরটিলা বাজার-সংলগ্ন খালি জায়গা, শাহপরাণ পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা, টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা, শাহী ঈদগাহস্থ খেলার মাঠের পেছনের অংশ, সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন এস ফল্ট মাঠ ও দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার থানাধীন ট্রাক টার্মিনালে স্থাপিত অস্থায়ী পশুর হাট বৃহস্পতিবার থেকে চালু হয়েছে। এসব হাট ইতোমধ্যে জমে উঠতে শুরু করেছে। শুক্রবার কিছু পশু বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্ত শুক্রবার বিকেল থেকে নগরীর আনাচে কানাচে রাস্তার পাশে অবৈধ হাট বসানোর কারণে বিক্রি কমেছে তাদের। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বৈধ হাটের ইজারাদারগণ।
এদিকে শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এবার দাম নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ আছে। বাজারে সর্বনিম্ন গরু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। আর মাঝারি আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ টাকায়। হাটে এর নিচে কোন গরু বিক্রি হচ্ছে না। এদিকে ছাগলও সর্বনি¤œ ১০ হাজারের নিচে বিক্রি হচ্ছে না। মাঝারি আকারের ছাগল বিক্রি হচ্ছে ১৫ হাজার টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, হাটে মাঝারি আকারের গরু সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। অনেক ক্রেতা দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। তারা দাম বলতে চাচ্ছেন না।
নগরীর কাজিরবাজারস্থ হাটে কথা হয় সুবিদবাজারের মুজিব খানের সাথে। তিনি জানান, গরু কিনতে আসছিলাম। দেখলাম দাম খুব বেশী। আর ২দিন গরুকে রাখা ও পরিচর্যা করা বাড়তি ঝামেলা। তাই চিন্তা করছি এই দামে গরু কিনলে শেষ রাতেই কিনবো।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গায় অস্থায়ী হাটের ইজারা দিলেও শুক্রবার পশুর হাট এমসি কলেজ গেইট ছাড়িয়ে সরকারী কলেজ গেইট পর্যন্ত চলে গেছে। এছাড়া মেজরটিলা বাজারেও অস্থায়ী হাটের অনুমতি থাকায় এদিকে শিবগঞ্জ থেকে মেজরটিলা পর্যন্ত রাস্তার দু পাশে বসেছে পশুর হাট। ফলে শুরু হয়েছে তীব্র যানজট। এতে এই রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণ পড়েছেন বিপাকে।
মেজরটিলা এলাকার প্রাইভেট চাকুরীজীবী শুক্রবার বিকেলে বন্দরবাজার থেকে বাসায় যাওয়ার পথে তীব্র যানজটের সম্মূখীন হন। তিনি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, টিলাগড়ের পাশাপাশি মেজরটিলায় হাটের অনুমোদন দেয়া ঠিক হয়নি। এতে শিবগঞ্জ থেকে শাহপরান গেইট পর্যন্ত হাট বসবে। ফলে যানজটের ভোগান্তিতে পড়বো আমরা জনসাধারণ।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে জানান, আমরা খবর পেয়েছি নগরীর কানিশাইল, সুবিদবাজার, পাঠানটুলা ও খোজারখলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ হাট বসানো হচ্ছে। সাথে সাথে কোতোয়ালী থানা, এয়ারপোর্ট থানা, জালালাবাদ থানা ও দক্ষিণ সুরমা থানার ওসিসহ এসএমপির সব থানার ওসিদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি হাট সরানোর জন্য। পুলিশ বিকেল থেকে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু পুলিশ সরিয়ে দেয়ার একটু পর আবার পাইকাররা গরু নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়। এরপরও পুলিশ মাঠে রয়েছে অবৈধ হাটের বিরুদ্ধে আমাদের একশন চলছে এবং চলবে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইখতেখার আহমেদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে নগর এলাকায় ৮টি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব হাটের তালিকা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে হাট বসলে পুলিশ দেখবে। অবৈধ হাটের ব্যাপারে পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপর কেন হাট বসে সেটা পুলিশই ভালো বলতে পারবে।