সিলেটে ঈদ আনন্দ পানিতে ভাসলো
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০২৪, ২:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : অবিরত ভারী বর্ষণে জলে ভেসে গেছে সিলেট নগর। নগরের অন্তত: ৭০ ভাগ এলাকা ডুবেছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ১৫ দিনের ব্যবধানে পঞ্চমবারের মতো নগর প্লাবিত হলো। এছাড়া ভারী বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিচু এলাকায়ও বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
রাস্তায় কোমর সমান পানি থাকায় তারা মসজিদ বা ঈদগাহে যেতে পারেননি। কোরবানি দিতেও সমস্যা হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু-কোমর সমান পানি দেখা গেছে। জলাবদ্ধতায় আবার স্রোত দেখা গেছে। স্রোতের ধারা এমন যেন প্রতিটি রাস্তা ছড়া খালে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টি আর ড্রেনের নোংরা পানি রাস্তা ছাড়িয়ে মানুষের ঘরে ঢুকে গেছে।
সোমবার ভোর থেকে বজ্র বৃষ্টির কারণে অবর্ণনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি সিলেট নগরের বাসিন্দারা ফিকে ঈদ পালন করছেন। ত্যাগের মহিমায় আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি আদায়ে তারা সকালে ঈদের জামাতে যোগ দিয়েছেন যে যার মতো করে। নোংরা পানি মাড়িয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঈদের জামাত ধরতে ঈদগাহ ও মসজিদে যেতে দেখা গেছে।
মুষলধারে বৃষ্টির কারণে মসজিদ-ঈদগাহ সবখানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। যে কারণে কর্তৃপক্ষ ঈদের জামাতের স্থান ও সময় পরিবর্তন করেছে। ঈদগাহের চেয়ে এলাকার মসজিদগুলোয় মুসল্লি ঈদের জামাত আদায় করেছেন।
সিলেট নগরের যেসব সড়কে কখনো পানি ওঠেনি, সেসব সড়কেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে মহানগরের অনেক এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে পড়েছে।
জলাবদ্ধতার শিকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, অন্যান্য সময়ে ঈদের নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিরা কোরবানির কার্যক্রম শুরু করলেও এবার পানিতে বাসাবাড়ির আঙিনা ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। কেউ কেউ পানি নেমে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন। অনেকে আবার পানির মধ্যেই কিছুটা শুকনা স্থানে কোরবানি দিচ্ছেন। এতে পশুর রক্ত ও বর্জ্য গিয়ে জলাবদ্ধতার পানিতে মিশছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের অন্তত ৭০ ভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ডুবেছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মাদরাসা। আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের তথ্যমতে, সিলেটে সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এদিকে, ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েব সাইট (আইএমডি) থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে মেঘালয়ার চেরাপুঞ্জিতে। এর আগে গত ১৫ জুন সকাল ৯টা থেকে ১৬ জুন সকাল ৯টা পর্যন্ত চেরাপুঞ্জিতে ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আর ভারতে অতি বৃষ্টির কারণে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারাসহ সড়ক নদ নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সিলেট নগর সংলগ্ন সুরমা নদী উৎরে নগরের ছড়া খাল দিয়ে ঢুকে অনেক এলাকা প্লাবিত করেছে। নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্যমতে, ভোর থেকে ভারী বর্ষণে মেজরটিলা ইসলামপুরের বিভিন্ন এলাকা, নগরের উপশহর বিভিন্ন এলাকা, তেররতন, যতরপুর, শাপলাবাগ, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়. কালীঘাট, সুবহানীঘাট, শিবগঞ্জ, সোনারপাড়া, মিরাবাজার, আগপাড়া, ঝেরঝেরীপাড়া, লামাবাজার, মীরের ময়দান, বাগবাড়ি, মদীনা মার্কেট, কুয়ারপাড় লালা দিঘীর পাড়, কানিশাইল, শাহী ঈদগাহ, খাসদবির, চৌখিদেখি, এয়ারপোর্ট সড়ক ও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে ২ জুন রাতে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরজুড়ে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন অধিকাংশ এলাকার পানি পরদিন নেমে যায়। তবে অন্তত ১২টি এলাকার পানি নামতে বেশ কিছুদিন সময় লেগেছিল। পরে ৮, ১০ ও ১৩ জুন আবারও ভারী বৃষ্টিতে সিলেট নগর প্লাবিত হয়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে বারবার নগর প্লাবিত হচ্ছে। ঈদের দিনও ভারী বৃষ্টিতে নগরের অনেক নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে অনেকে কোরবানিও দিতে পারছেন না। বৃষ্টি না কমায় পানিও নামছে না। তবে নগর যেন জলাবদ্ধ না হয়, সে জন্য আরও কী করা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে ভাবা হচ্ছে।
এদিকে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে জেলার, বিশেষ করে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নিচু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এসব উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি অনেক রাস্তাঘাটও তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র চালুর পাশাপাশি বন্যাকবলিত মানুষদের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ শুরু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের তথ্যানুযায়ী, জেলার প্রতিটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এ ছাড়া আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা, সারি ও কুশিয়ারা নদ-নদীর তিনটি স্থানে (পয়েন্ট) পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার এবং সারির সারিঘাট পয়েন্টে শূন্য দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।