জলমগ্ন সিলেট : সেপটিক ট্যাঙ্কের ময়লার দুর্গন্ধে নগরবাসীর নাভিশ্বাস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০২৪, ৩:৩২:৩১ অপরাহ্ন

ছবি : সংগৃহীত
স্টাফ রিপোর্টার :
জলমগ্ন সিলেট নগরীতে সেপটিক ট্যাঙ্কের ময়লার দুর্গন্ধে শহরবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে সেপটিক ট্যাঙ্ক এবং আন্ডারগ্রাইন্ডের রিজার্ভ পানির ট্যাঙ্কে বন্যার পানি ঢুকে একাকার হয়ে গেছে। বিশেষ করে উপশহর এলাকায় এর চিত্র ভয়াবহ। ময়লা-আবর্জনায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
এদিকে নগরীতে রোববার রাত থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ছিল। এর পর থেকে প্রতিদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও সড়ক আবারও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি নগরীর ফায়ার সার্ভিসের অফিসটিও পানিতে তলিয়ে গেছে।
বুধবার (১৯ জুন) সকালে সিলেট নগরীর উপশহর এলাকার অনেক বাসায় কোমরসমান পানি ছিল। পানি আরো বাড়ার আশঙ্কায় উপশহর, যতরপুর, তালতলা, জামতলা, ছড়ারপাড়, কামালগড়, মাছিমপুর, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ এলাকাসহ নিচু এলাকার অনেক বাসিন্দা নৌকা ভাড়া করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে, আত্মীয়-স্বজনের বাসায় কিংবা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।
বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলোতে মানুষজনের চলাচল অনেক কম। তবে অফিসগামী মানুষেরা পানি মাড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যেতে দেখা গেছে। রোজভিউ হোটেলের সামনে দিয়ে উপশহরমুখী রাস্তায় ঘোলা, নোংরা এবং দুর্গন্ধযুক্ত পানি থই থই করছে। সড়কের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমরপানি। জমে থাকা পানিতে ভাসছে সেপটিক ট্যাঙ্কের ময়লা, বারোয়ারি ময়লা-আবর্জনা। এ পানি মাড়িয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা চলাচল করছে। মাঝে মধ্যে সেই পানি মাড়িয়ে যেতে দেখা গেছে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন।
উপশহর এলাকার ই-ব্লকের বাসিন্দা শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উপশহরবাসী। বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। দোকানপাঠের অনেক পণ্য পানিতে ভেসে গেছে, অনেক জিনিস নষ্টও হয়েছে। কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তিনি বলেন, অনেকের বাসায় সেপটিক ট্যাঙ্কের ময়লার সাথে বন্যার পানি মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র। পাশাপাশি চুলা-নলকূপ ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে সীমাহীন। অনেকেই এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।
ভুক্তভোগী নগরবাসীরা জানিয়েছেন, মানুষের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাবার ও বিশুদ্ধ পানি। এ ছাড়া পানিবন্দী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রসূতি ও নারীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়, অটোরিকশা, টমটম এবং রিকশাচালকেরা যাত্রী পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনে সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশনায় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না করা ও শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। পানিতে ভাসমান ময়লা-আবর্জনা অপসারণে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছেন।
ভারী বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ঈদের দিন থেকে সিলেটে বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে গত ২৯ মে সিলেটে বন্যা দেখা দিয়েছিলো সিলেটে। প্রথম দফার রেশ কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় দফায় সিলেটের সব কটি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে।