এ মুহূর্তে যা করণীয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুন ২০২৪, ১২:২৮:৪৮ অপরাহ্ন
সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। গত তিনদিন ধরে সিলেটে ও এর উজানের ভূখন্ডে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কমছে নদ-নদী ও প্লাবিত হওয়া এলাকাগুলোর পানি ও এর পাশাপাশি বন্যা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমছে। অনেকের মতে, এই সংখ্যা ইতোমধ্যে ১০ লাখ থেকে সাড়ে ৮/৯ লাখে নেমে এসেছে। প্রশাসন সূত্র মতে, বর্তমানে সিলেটের ১০৭টি ইউনিয়নে এবং নগরীর ১৩ ওয়ার্ডে বন্যার পানি রয়েছে। তবে পানি দ্রুত নামছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে সরকারী ও বেসরকারীভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। যদিও তা অপ্রতুল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয় জানিয়েছে, সুরমার পানি কিছু কিছু পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও অনেক স্থানে বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, আগামী তিনদিন সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
জানা গেছে, বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও সিলেটের অনেক এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে আছেন বহু এলাকার বিপুল সংখ্যক মাানুষ। সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকার ড্রেন, ছড়া, খাল পরিষ্কার না থাকায় এবং এক ড্রেনের সাথে অন্য ড্রেনের সংযোগ না থাকায় পানি নামতে দেরী হচ্ছে। অনেক স্থানে ড্রেনের ময়লা আবর্জনা উপরে উঠে আসায় সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধময় পরিবেশ। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে জমে আছে ময়লা পানি। অনেক স্থানে ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষ। অভাব দেখা দিয়েছে শিশুদের খাদ্যের। সুনামগঞ্জে এখনো প্রায় ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পানি কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে ছাতক, দোয়ারা, মধ্যনগর, শাল্লা, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, দিরাই ও শান্তিগঞ্জ এলাকা।
উজানের পানি নামার সাথে সাথে ভাটি এলাকার নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণেই সমস্যা বেশী হয়। ঢল নামলেই পানি বাড়ে।
এদিকে সিলেট সিটি মেয়র জানিয়েছেন, সিলেট নগরীর ২৩ টি ছড়া ও খাল যেখান থেকে উৎপত্তি হয়েছে সেখান থেকে খনন করে সুরমা নদী পর্যন্ত নেওয়া হবে। একই সাথে সুরমা নদী খনন করা হবে। সুরমা নদী খননের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত ৫০/৬০ বছরেও এই নদীর সিলেট অংশে তেমন কোন পরিকল্পিত ও কার্যকর খনন কার্য হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সিলেট শহর থেকে পালিয়ে যাওয়া বহু শহরবাসী কুশিঘাট এলাকা দিয়ে হেঁটে সুরমা নদী পেরিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তখন সুরমার ওই অংশে হাঁটু পানি ছিলো। এতে বুঝা যায়, স্বাধীনতার আগে থেকেই সুরমা নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে। আর এরপর বর্তমানে আরো অর্ধ শতাব্দি অতিক্রান্ত হয়েছে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য খনন কার্য ছাড়াই। এ অবস্থায় পলি জমে নদী ভরাট কী পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। নদীটির অবস্থা যখন এমন তখন তার পানি ধারণ ক্ষমতা অনেক নীচে নেমে এসেছে। ফলে বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলে সুরমা নদী প্লাবিত হয়ে আশপাশে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। এজন্য দায়ী কী বা কারা। এ বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখা জরুরী এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ কাম্য।
ইতোমধ্যে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, সামগ্রিকভাবে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী খনন করা হবে। আগামীতে সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকা কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যায় সে লক্ষ্যে আলোচনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সুরমা নদীর ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটার খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে দাবি করা হলেও সত্যিকার অর্থে কতটুকু কী হয়েছে- সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
সচেতন মহল নদী খননের ক্ষেত্রে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ এবং এর যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছেন। কাজ না করেই অর্থ লুটপাটের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা প্রকৃত অর্থেই নদী খননের ওপর জোর দিচ্ছেন। কারণ প্রতি বছর এভাবে বন্যা দেখা দিলে এসব জেলার লাখ লাখ মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ ও দুর্দশার মধ্যে পড়তে হবে। এছাড়া মিটামইনের অলওয়েদার সড়কটি বন্যার পানি নিম্নাঞ্চলে মারাত্মক প্রতিবন্ধক বলে বিপুল সমালোচিত হচ্ছে। এমনকি খোদ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এই সড়ক নির্মাণ ভুল হয়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। হাওরের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিশেষভাবে বন্যার পানি নামার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধক এই সড়কে পানি যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত কালভার্ট নির্মাণে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হোক, এমন দাবি সচেতন মহলের। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।