হাওরে পানি আছে, মাছ নেই!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২৪, ৬:১৩:৩৮ অপরাহ্ন
জামালগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের হাওরে যে দিকেই চোখ যায় শুধু পানি আর পানি-পানি। চারিদিকে এতো পানি থাকলেও হাওরে মাছ নেই। ইজারাদাররা স্থানীয় মৎস্য বিভাগকে ম্যানেজ করে শুষ্ক মৌসুমে (ফাল্গুন-চৈত্র মাস) হাওরের জলমহাল-খাল, বিল, ডোবা সেচ করে মাছ নিধনই এর মূল কারণ বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সুনামগঞ্জের হাওর এক সময় মাছের রাজ্য হলেও আগের তুলনায় এখন দেশীয় প্রজাতীর মাছ গ্রাম এলাকার হাট-বাজারেই মিলছেনা। প্রায় ৩০-৩৫ প্রজাতীর দেশী মাছ বিলুপ্তির পথে। বাজার দখল করেছে চাষযোগ্য হাইব্রিড জাতীয় মাছ। যার কারণে হাইব্রীড জাতীয় চাষের মাছ খেয়ে মিটাতে হচ্ছে আমিষের চাহিদা। হঠাৎ কিছু দেশী মাছ মিললেও চড়া দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এই হাওর এলাকায় এক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ মিঠা পানির দেশী সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া ওই মাছ স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ভৈরবে রপ্তানি করা হত। যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির খাতে ভুমিকা রাখতো। এক যুগ আগেও বহু প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত হাওরে। এখন আর এই সব মাছ সচরাচর চোখে পড়েনা। ফাল্গুন- চৈত্র মাসে অবাধে জলমহাল সেচে মৎস্য নিধন করার কারণেই দেশী মাছ কমে যাচ্ছে। নির্বিচারে পোনা মাছ ধরা, জলমহাল সেচে মাছ ধরা, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, কৃষি জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, বর্ষায় মাছের প্রজনন ব্যপকভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়া এ সব কারণে গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০-৩৫ জাতের দেশী মাছের প্রজাতী প্রায় বিলুপ্তির পথে।
ভরা বর্ষায় জেলেরা ভাসান পানিতে জাল ফেললেও তেমন কোন মাছ পাচ্ছেন না। সারাদিন জাল টেনে, পরিশ্রম করে নামমাত্র যৎ সামান্য ছোট মাছ ধরে হাওর থেকে প্রায় খালি হাতেই ফিরে আসছেন জেলেরা। কোনরকম ছোট মাছ পেলেও এই মাছ বিক্রি করে তাদের সংসার চলেনা। বিলুপ্তির পথে রয়েছে রানী মাছ, গুতুম, দারকিনা, চাপিলা, চাটুয়া, চাঁন্দা, বড় চান্দা, গোল চান্দা, আইড়, গুলশা, পাবদা, দেশী পুঁটি, সরপুঁটি, তিত পুঁটি, বাইলা, মেনি, ভেদা, শিং, কৈ, টাকি, শোল, কাংলা, মলা, ঢেলা, কানপোনা, রিটা, পিয়ালি, খৈলশা, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, কাজলি, চ্যাং, ছোট চিংড়ি, বাতাশি, বড় বাইম, বাগাই, তারা বাইম, কাইক্যা ইত্যাদি। এসব মাছের জায়গা দখল করেছে হাইব্রীড পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, সিলভার, কার্গো, মিরর কার্প, ঘ্রাস কার্প ও সরপুঁটি ইত্যাদি।
এদিকে, জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সর্ববৃহৎ পাকনা হাওর ও হালির হাওর ঘুরে কয়েকজন জেলের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এখন আগের মতো মাছ নেই হাওর বা নদীতে। হাওরে পাতানো জাল তুলে হতাশ হতে হয় তাদের। কিছু ছোট পুঁটি, চান্দা, বাইলা, তারা বাইম পাঁচ মিশালী মাছ ছাড়া অন্য কোনো মাছের দেখা নেই।
জেলেরা বলেন, সারা দিন হাওরে মাছ মেরে তাদের রোজের পারিশ্রমিক অনেক দিন হয় না। আগে বর্ষার পানিতে হাওরে রুই, কাতলা, বোয়াল, কালিবাউসসহ অনেক জাতের মাছ পাওয়া যেত। এখন কিছু ইছা, ছোট পুঁটি আর চান্দার গুঁড়া কিছু পাঁচমিশালি মাছ ছাড়া তেমন কোন মাছ মিলেনা। এর মধ্যে জলমহাল (বিল) ইজারাদারদের রক্তচক্ষু ও তাদের দৌরাত্মের কারণে জেলেরা চরম হতাশ হয়ে পড়েন। ভরা বর্ষায় হাওরের বেশ জায়গাজুড়ে জলমহালের সীমানা দিয়ে তারা জেলেদের মাছ ধরার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এতে অনেক সময় বাকবিতন্ডায় জেলেদের উপর অত্যাচার নেমে আসে।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম (অ:দা:) কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে বলেন, আমি এ সব বিষয়ে জড়িত না। যখন অভিযোগ পেয়েছি ব্যবস্থাও নিয়েছি।