বড়লেখায় ঠেলাচালকের বিদ্যুৎসংযোগ কেটে দিল গ্রাম পঞ্চায়েত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুন ২০২৪, ৬:৪০:২৯ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি: বড়লেখা উপজেলার পূর্ব দোহালিয়া গ্রামের এক নিরীহ ঠেলাচালক ও তার ভাইয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে ফেলেছে গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকজন। গত ২৪ জুন পঞ্চায়েতের লোকজন দলবেধে বৈধ বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ৬ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় তারা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা বিদ্যুৎ অফিস, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। কোনো বৈধ গ্রাহকের জোরপূর্র্বক বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ফৌজদারী অপরাধ হলেও ভোক্তভোগীরা হতদরিদ্র হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ (পিডিবি) কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বিদ্যুৎ গ্রাহক নুরুজ আলী ও তার ভাই আরুজ আলীর পিডিবির আবাসিক প্রকৌশলী বরাবর ২৭ জুন প্রেরিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) গ্রাহক দিনমজুর ঠেলাচালক নুরুজ আলী ও আরুজ আলী পিডিবির বৈধ ও নিয়মিত গ্রাহক। ৪ মে নুরুজ আলীকে না জানিয়ে তার স্ত্রী ছালেয়া বেগমের নিকট হতে প্রায় ৫০ ফুট বিদ্যুৎলাইন পরের দিন ফেরত দেওয়ার কথা বলে গ্রাম পঞ্চায়েতের মুরব্বি মাওলানা আনোয়ার হোসেন ধার নেন। কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও উক্ত বিদ্যুতের তারগুলো মাওলানা আনোয়ার হোসেন আর ফেরত দেননি। ঠেলাচালক নুরুজ আলীর স্ত্রী তাগদা করলে আজ নয় কাল দিবেন বলে ঘুরাতে থাকেন। আবারও তার ফেরতের তাগদা করতে গেলে মাওলানা আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে ছালেহা বেগমের কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে আনোয়ার হোসেন বিদ্যুৎগ্রাহক ঠেলাচালক নুরুজ আলী ও তার স্ত্রী ছালেহা বেগমের বিরুদ্ধে গ্রামে বিচার সালিশ ডাকেন। ২৪ জুন অনুষ্ঠিত বিচার সালিশ থেকে উঠে গিয়ে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ফয়জুল হক, মাওলানা আনোয়ার হোসেন, ময়নুল হক, রফিক উদ্দিন, নুর হোসেন, চেরাগ আলী প্রমুখ নির্দেশ দিয়ে ময়নুল ইসলামকে দিয়ে অবৈধভাবে জোরপূর্বক বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
গ্রাহক ঠেলাচালক নুরুজ আলী অভিযোগ করেন, আমি অসহায় দরিদ্র মানুষ। লাইন মেরামতের জন্য তারা পরে দিয়ে দিবেন বলে আমার প্রায় ৪ হাজার টাকার বিদ্যুৎ লাইন (তার) নিয়েছিল। ওই তার ফেরৎ চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের ফয়জুল হক, মাওলানা আনোয়ার হোসেন, রফিক উদ্দিন, ময়নুল ইসলাম প্রমুখ জোরপূর্বক আমার বিদ্যুৎলাইন সম্পুর্ণ অন্যায়ভাবে কেটে দিয়েছেন। পুনঃসংযোগের জন্য বিদ্যুৎ অফিসসহ অনেকের কাছে ধর্না দিয়েও সমাধান পাচ্ছি না। পিডিবি অফিসে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও তারা শনিবার (২৯ জুন) পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ৬ দিন ধরে আমি ও আমার ভাইয়ের পরিবার বিদ্যুৎহীন অবস্থায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছি।
গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মাওলানা আনোয়ার হোসেন জানান, নুরুজ আলী ও তার স্ত্রী গ্রাম পঞ্চায়েতের নিয়মকানুন মানে না। তাদের খারাপ আচরণের জন্য তিনি ও পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ফয়জুল হকের উপস্থিতিতে পঞ্চায়েতের লোকজন নুরুজ আলীর বিদ্যুৎলাইন বিচ্ছিন্ন করেছেন।
পিডিবির জুড়ী অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী কবির আহমদ জানান, বৈধ কোনো বিদ্যুৎ গ্রাহকের বিদ্যুৎসংযোগ জোরপূর্বক কোনো ব্যক্তি/গ্রাম পঞ্চায়েত বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। এটি ফৌজদারী অপরাধ। ২৭ জুন ভোক্তভোগী গ্রাহক এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। একজন সাব-এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ারকে অভিযোগটি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।