বৃষ্টি বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০২৪, ৩:৩০:১৫ অপরাহ্ন
কমছে না কুশিয়ারা অববাহিকার পানি
স্টাফ রিপোর্টার : দুই মাসে তিন বার বন্যা। এখনো পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ। রীতিমতো বন্যার তান্ডব চলছে সিলেটে। এরমাঝে নতুন করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও আছে। তাই সিলেটবাসী যেন এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে। নতুন শঙ্কা ও আতঙ্ক ভর করেছে বিপর্যস্ত মানুষের উপর।বৃষ্টি ও বন্যার মাঝে শুরু হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। অথচ অনেক এলাকা থেকে বন্যার পানি সরেনি। কেন্দ্রের আশপাশেও পানি আছে। অনেক স্থানে পানি মাড়িয়ে ও নৌকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।
এরমাঝে ফের টানা বর্ষণ শুরু হয়েছে। ভারতে ও বৃষ্টিপাতের ফলে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে পানি বাড়তে দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, শেষ ৩৬ ঘন্টায় সিলেটে ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে বুধবার সন্ধ্যা ৬টার পর বেশ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। সে হিসেব আবহাওয়া অফিস থেকে পাওয়া যায়নি।
সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি কিংবা নিচে চলে এসেছিলো। তবে নতুন বৃষ্টিতে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে কুশিয়ারার পানি কমছেই না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মতে, দুটি কারণে কুশিয়ারা নদীর অববাহিকার পানি কমছে না। এর মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে- ভারতের বরাক থেকে এখনো ঢল নামছে। আর সিলেট অঞ্চলের পানির বেসিনও সংকুচিত হয়েছে। সুনামগঞ্জসহ ভাটি অঞ্চল পানিতে টুইটুম্বুর থাকার কারণে পানি কমছে না।
তিনদিনে যে পানি কমে এক রাতের বৃষ্টিতেই সে পরিমাণ পানি বেড়ে যায়। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ, শ্যাওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জে বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত দুই দিনে পানি আরো বেড়েছে।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় অমলসিদে ৩২ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকা দিয়ে সিলেটের উজানের পানি নামার পাশাপাশি মৌলভীবাজারের পানি নামে। এ কারণে সিলেট জেলার মধ্যে বন্যার তা-ব চলছে ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে। এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জের মানুষও একইভাবে একমাসের বেশি সময় ধরে বন্যাকবলিত হয়ে আছেন। এসব এলাকার সবকিছু থমকে আছে। মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ অনেকে জানিয়েছেন, এক মাসের অধিক সময় ধরে তাদের এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ঈদও করেছেন পানির মধ্যে। মাঝখানে ৩-৪দিন স্বস্তি ছিল। কিন্তু বৃষ্টি ও পানি নামার গতি না থাকায় বন্যার কোন উন্নতি নেই। কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেনও। কিন্তু ফের বন্যা আসার কারণে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।বিশেষ করে ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জের কয়েকশ বিদ্যালয় এখনো পানির নিচে। এর মধ্যে দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
পাউবো জানায়, সিলেট জেলায় সুরমা, কুশিয়ারাসহ অনেক সীমান্ত নদীর ২৫ কিলোমিটার এলাকার বাঁধ ভেঙে গেছে। কোথাও কোথাও পানি উপচে লোকালয়ে ঢুকছে। এখনো কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকার নদীর বাঁধগুলোর পানি নিচে রয়েছে। তৃতীয় দফা অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বেশিসংখ্যক বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এবার বন্যা দীর্ঘ হচ্ছে।
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বাড়ছে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। দূষিত পানি পান ও বানের পানিতে চলাফেরা করায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (রেসপিরেটরি ট্রাক্ট ইনফেকশন) ও চোখের রোগ দেখা দিয়েছে দুর্গতদের।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্র জানায়, সিলেট জেলার ১৩ উপজেলায় ৯৫টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত আছে। ১ হাজার ৬৪টি গ্রামের ৫ লাখ ৪০ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত আছেন। জেলার ৬৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে (৯ জুলাই) বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯ হাজার ৩৬০ জন মানুষ আশ্রয় অবস্থায় আছেন।
এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলার মধ্যে ১১টি-ই বন্যাদুর্গত। এসব উপজেলার ৮৮ ইউনিয়নের মধ্যে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৫৯টি। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৪৩টি।মৌলভীবাজারের ৭ উপজেলার মধ্যে পাঁচটি বন্যাদুর্গত। এর মধ্যে ২৩টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি। হবিগঞ্জের ৯ উপজেলার মধ্যে চার ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত। আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১১টি।
এরমাঝেও সিলেট দেশের ভারিবর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানায়। আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।