দিঘী, খাল ও ছড়া ভরাটের ফলে বন্যার ঝুঁকি বেড়েছে : ড. আইনুন নিশাত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০২৪, ৭:৩২:৫০ অপরাহ্ন
সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকা বন্যা প্লাবিত হওয়ার কারণ ও টেকসই বন্যা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় নগর ভবনের জরুরি কার্যক্রম সেন্টারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে ও স্থপতি শাকুর মজিদের পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সিলেট নগরীতে আগে অনেক জলাধার ছিল। বিভিন্ন দিঘী, খাল ও ছড়া ভড়াট করে স্থাপনা নির্মাণ করার ফলে বন্যার ঝুঁকিতে পুরো নগরী। নদীর পাড়ে অর্থনৈতিক জোন করায় সুরমা নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা এখন অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পুরো শহর প্লাবিত হয়ে যায়। আগে লালদিঘীর পাড় বিস্তৃত ছিলো। এখন এই দিঘী নাই বললেই চলে। ছড়া ও খাল দখল করে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন বাসা বাড়ির দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। ড্রেনে ময়লা ও পলিথিন ফেলে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি ও বিভিন্ন জলাধার মেরে ফেলা হয়েছে। টিলা কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোই সিলেটের প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম কারণ।
তিনি আরও বলেন, সারাবিশ^ব্যাপী জলবায়ুর মারাত্মকভাবে পরিবর্তন ঘটেছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। অতিদ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। সংশ্লিষ্ট দফতরের সাথে সমন্বয় করে বন্যা ও প্রকৃতিক দুর্যোগ রোধে করণীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে অনুরোধ করেন তিনি।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, আমি মনে করি সুরমা নদীর পানি বেড়ে যখন বিপদসীমা অতিক্রম করে তখন সিসিক নেতৃবৃন্দকে ২টি কাজ করতে হবে। প্রথমতো নদীর পানি বাড়লে সিসিক থেকে ঘোষণা দিতে হবে। এতে করে বন্যার পানি হয়তো আটকানো যাবে না কিন্তু মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। দ্বিতীয়ত ফ্লাড ওয়াল তৈরি করতে হবে। এই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পরিবেশ প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তা করতে হবে এবং নগরীর ভিতরের পানি বের করতে নো সুইচ এবং প্রয়োজনে পাম্প তৈরি করতে হবে। খাল ভরাট বন্ধ করতে হবে এবং খালগুলোকে বড় করতে হবে। পানির প্রবাহ যেখানে বাধাগ্রস্ত হয় সেখানে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বৃষ্টি শহরের বন্যার প্রধান কারণ এবং দু:সংবাদ হল এই ধরনের অতি বৃষ্টি আরও হবে। তাই নগরীর ভিতরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে। ভারতে পাহাড়ি ঢল নিয়ে তিনি বলেন, সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি কন্ট্রোল করবেন কিভাবে। ১৯৭২ সালে আমাদের সরকার প্রধান ও ভারতে সরকার প্রধান মিটিং করে যৌথ নদী কমিশন করেছেন। তাই এই পানি আসাতো বন্ধ করা যাবে না।
সভাপতির বক্তব্যে সিসিক মেয়র মোঃ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অভিজ্ঞদের পরামর্শকে কাজে লাগিয়ে আগামী বছর বন্যার প্লাবন থেকে সিলেট নগরীকে রক্ষা করা হবে। কাউন্সিলরসহ সিলেটের পরিবেশবীদ ও সংশ্লিষ্ট সকল দফতরের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। তারা আমাদের সহযোগিতা করার আশ^াস প্রদান করেছেন। সবার অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করে সিটি কর্পোরেশন কাজ করবে এর পাশাপাশি আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। ছড়া বা খালে ময়লা আবর্জনা ফেলে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি ও পরিবেশ দূষণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। স্কুল জীবন থেকে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
অন্যান্য আলোচকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আর্কিট্যাক্ট ইকবাল হাবিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা আ. খান, এস এম মাহমুদুর রহমান। এ সময় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর-কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কমকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি