সাংবাদিক তুরাব হত্যার সপ্তাহ পার: শাস্তি পাক দোষীরা, শান্তি পাক আত্মা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০২৪, ৮:১১:৩৪ অপরাহ্ন

জালালাবাদ প্রতিবেদন :
সাংবাদিক তুরাব হত্যার সপ্তাহ খানেক অতিবাহিত হলো। কিন্তু স্বজন প্রিয়জন সহকর্মী সাংবাদিকদের মতো সিলেটের অনেক সাধারণ মানুষও ভুলতে পারছেন না পুলিশের নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার এই তরুণ সাংবাদিককে, যার কোন বিশেষ ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিলো না এমন ঝুঁকি নিয়ে ছবি ও সংবাদ সংগ্রহের জন্য অস্ত্রের সম্মুখীন হওয়ার। চাইলে সে আড়ালে আবডালে নিরাপদ স্থানে থেকে ঐদিন তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারতো। কিন্তু সচেতনতা, বিবেকের তাড়না ও তাগিদ থেকে সে ঘটনার বস্তুনিষ্ট সংবাদ ও ছবি সংগ্রহের জন্য এমন ঝুঁকি নিয়েছিলো। কিন্তু ঘাতকের বুলেট এমনি সুযোগের সন্ধানে ছিলো। সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো এই নির্ভীক প্রতিবাদী ও অসম সাহসী সাংবাদিকের কণ্ঠ ও কলম চিরতরে স্তব্ধ ও স্থবির করে দিতে।
আবু তাহের মোঃ তুরাব শুধুমাত্র একজন সাংবাদিকই ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন স্নেহময়ী মায়ের সন্তানও। ছিলেন ভাইবোনদের একজন স্নেহের ভাই, সর্বোপরি একজন স্ত্রীর প্রেমময় দায়িত্বশীল স্বামীও। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তার যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যাওয়ার কথা ছিলো, কারণ তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী সে দেশের স্থায়ী বাসিন্দা ও নাগরিক।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সিলেটের প্রায় সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের স্বপ্নের দেশ বিলাত বা ব্রিটেন। অনেকের সেকেন্ড হোম বা দ্বিতীয় বাড়ি হচ্ছে ব্রিটেন। সে দেশে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর এদেশের বিশেষভাবে বৃহত্তর সিলেটের লাখো তরুণ ও যুবা। ভালো পড়াশোনা ও ডিগ্রি লাভের পাশাপাশি উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখা এসব তরুণ যুবার স্বপ্নের দেশ এই যুক্তরাজ্য। তুরাবও সে দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলো। তবে একথা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা ও নাগরিক হলেও মাতৃভূমির সাথে তার বন্ধনে চিড় ধরতো না। সেখানে গেলেও তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে, সিলেটকে নিয়ে ভাবতেন। সিলেটবাসীর সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা ও স্বপ্নের কথা তিনি বৃহত্তর পরিসরে অবশ্যই তুলে ধরতেন। বলা হয়, একবার যিনি সাংবাদিক বা কবি-সাহিত্যিক সারাজীবনই তিনি সাংবাদিক ও কবি-সাহিত্যিক। এসব পেশার নেশা বা ভালোবাসা কেউ কখনো ত্যাগ করতে পারে না। তাই ধরে নেয়া যায়, তুরাব বেঁচে থাকলে বিলেতে গিয়েও জীবন ধারণের অন্য বা অন্যান্য পেশার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় জড়িত থাকতেন। যেমন আরো অনেক প্রবাসী সাংবাদিক বিদেশে বিশেষভাবে যুক্তরাজ্যে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে স্বীয় পুরোনো পেশার সাথে জড়িত। কিন্তু ঘাতকের ৯৮টি পিলেট তথা গুলি ঝাঁঝরা করে দিয়েছে সহজ সরল পরোপকারী উদ্যমী তরুণ সাংবাদিক তুরাবের সেই স্বপ্ন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা। কোন অন্যায়কে হাজারো বার ন্যায় বললেও তা ন্যায় হয়ে যায় না। একটি পরিকল্পিত জ্বলন্ত হত্যাকান্ডকে যতোই ছাইচাপা দেয়া হোক, তাকে চিরদিন ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায় না।
আশা করি তুরাবের নির্মম হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটবে, একটি সত্য বেরিয়ে আসবে সগৌরবে শির উঁচু করে, তখন অন্যায় ভুলুন্ঠিত এমনি সমাধিস্ত হবে- এমন প্রত্যাশা সকলের। আর এমনটি যখন ঘটবে তখন শান্তি পাবে অন্যায় হত্যাকান্ডের শিকার নিরপরাধ সাংবাদিক তুরাবের আত্মা।





