নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে গানমিছিল ও সমাবেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জুলাই ২০২৪, ৯:২৮:১৮ অপরাহ্ন

সরকারি বাহিনীর নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে ‘গানমিছিল’ কর্মস‚চি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা চারটায় সিলেট নগরীর চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদমিনার প্রাঙ্গণ থেকে গানমিছিল শুরু হয়ে নগরীর জিন্দাবাবাজার সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এই গানমিছিলের আয়োজক ছিল সিলেটের নাট্যসংগঠন নগরনাট, নাগরিক সংগঠন দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন।
বেলা চারটায় এই গান মিছিলের আয়োজক নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য অরূপ বাউলের কণ্ঠে ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা কারো দানে পাওয়া নয়’ গান দিয়ে শুরু হয় গানমিছিল। এতে অংশগ্রহণ করেন সিলেটের নাট্য, সাংস্কৃতিক কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মিছিলের অগ্রভাগে সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নেতৃত্ব দেন।
দেশে চলমান হত্যা, অবিচারের প্রতিবাদে এই গানমিছিলে গান পরিবেশন করেন নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য উজ্জ্বল চক্রবর্তী, সদস্য আঁখি, স্বর্ণা, তন্বী, শাওন, রাজন, দেবর্ষি, রাজ, রাজ্যেশ্বরী, তিন্নিসহ সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে এসে শেষ হয় গানমিছিল। গানের মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রতিবাদী ¯েøাগানও দেন সিলেটের সাংস্কৃতিকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
গানমিছিল শেষে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদমিনারের সামনে সমাবেশে কর্মস‚চির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য দেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র বিক্ষোভ দমনের নামে দেশে স্মরণকালের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে। যা আমাদের মানবিক চেতনাকে ক্ষুব্ধ করেছে। সরকারের ব্যর্থতা, উষ্কানি ও নৃশংসতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র প্রত্যক্ষ করে সারাদেশের মানুষের মত আমরা স্তম্ভিত, ব্যথিত ও সংক্ষুব্ধ।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো সাধারণ মানুষের উপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়নি। আজকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, কোটা বিরোধী আন্দোলনের জন্য হেলিকপ্টার, সাঁজোয়া যান থেকে গুলি করা হয়। পুলিশ মিছিলের সামন পিছন থেকে গুলি করেছে। ২১১ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ৪৫ শতাংশই শিক্ষার্থী। বয়সের হিসাবে শতকরা ৭৫ ভাগ অল্প বয়সী। এই যে নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে আমরা মনে করি এটা রাষ্ট্রীয় গণহত্যা। এই গণহত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত আমরা চাই এবং তদন্তের মাধ্যমে প্রতিটি হত্যার আলাদা আইন প্রক্রিয়ায় বিচার হবে এটা আমাদের মুখ্য দাবী।
দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা-র সমন্বয়ক দেবাশীষ দেবু বলেন, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নানা শ্রেণী পেশার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই মানুষ হত্যার প্রতিবাদে আজ এই কর্মস‚চী করেছি। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এরকম হত্যাযজ্ঞ আর কখনো হয়নি। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবীর সাথে সংহতি জানাচ্ছি।
নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য অরূপ বাউল বলেন, যেকোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই দেশে হত্যাকাণ্ড করা হয়। কারণ বিচার নেই এই দেশে। চলমান এই ছাত্রদের আন্দোলনে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবীসহ সব ধরনের মানুষকে হত্যা হয়েছে। আমরা মনে করি এই নির্বিচারে হত্যার দায় সরকারি বাহিনীর। আমরা যেহেতু সংস্কৃতি কর্মী তাই আমরা গানে গানে সরকারের এই হত্যাযজ্ঞের বিচার চেয়েছি রাজপথে।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের সভাপতি ডা শাহজামান চৌধুরী বাহার, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় সভাপতি সৈয়দা শিরিন আক্তার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড: দিলারা রহমান, রাজনৈতিক সংগঠক এডভোকেট আনসার খান, উজ্জ্বল রায় ও রেজাউল কিবরিয়া, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাবেক সভাপতি মনির হেলাল, আইনজীবি অরূপ শ্যাম বাপ্পি ও জাকিয়াজালাল, নাট্যকর্মী নাহিদ পারভেজ ও বাপ্পী ত্রিবেদী, সংস্কৃতিকর্মী রাজীব রাসেল ও দেবজ্যোতি দেবু, স্থপতি প্রসেনজিৎ রুদ্র, আয়কর উপদেষ্টা মুখলেছুর রহমান, যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিউর রাফু, সাবেক ছাত্রনেতা খালেদ মুরশিদ মুন্না, কিবরিয়া চৌধুরী সুমন ও শহীদুজ্জান পাপলু, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক কর্মকর্তা রোমেনা বেগম রোজী, শিশু কিশোর সংগঠন উষা’র পরিচালক নিগাত সাদিয়া। বিজ্ঞপ্তি





