দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বিক্ষোভ, হামলা, সংঘর্ষ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:০৮:৩৯ অপরাহ্ন
কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা : কুমিল্লায় শনিবার দুপুরে নগরীর পুলিশ লাইনস ও রেসকোর্স এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে স্বেচ্ছাসেবক ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের হামলার ঘটনায় সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীরা হলেন আরফান মজুমদার (১৬), সৌরভ (২৫), মারুফ (১৬), আসিফ (১১), মৃদুল (১২), সুজন (১৩) ও সানি (১৮)। তাঁদের মধ্যে সৌরভকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর অন্যদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহত ব্যক্তিদের অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, সৌরভের চোখের আঘাত গুরুতর। তাঁকে ঢাকায় চক্ষু ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় একাধিক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন, এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ তথ্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বগুড়া রণক্ষেত্র : বগুড়ায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে বেশ কয়েক শিক্ষার্থী আহত হন। শনিবার বিকেল চারটার দিকে শহরের সাতমাথা থেকে মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণকালে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সরকার পতনের একদফা দাবিতে বেলা আড়াইটা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাজারো শিক্ষার্থী-জনতা সাতমাথা এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের মিছিল-স্লোগানে সাতমাথা এলাকা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
বেলা তিনটার দিকে সাতমাথা থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় জিলা স্কুলের ফটকের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ মিছিলটি জিলা স্কুল অতিক্রম করার সময় পুলিশকে দেখে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, বোতল ও জুতা নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীরা পাল্টা ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জিলা স্কুলের ভেতরে অবস্থান নেন।
মিছিলের একাংশ সার্কিট হাউস মোড় অতিক্রম করার সময় পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে সার্কিট হাউসের অভ্যর্থনাকক্ষের কাচ ভাঙচুর করেন। দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েক শিক্ষার্থী আহত হন। পরে জলেশ্বরীতলা, সাতমাথা, সার্কিট হাউস মোড়, জেলা জজ আদালতের সামনের সড়ক, কালীবাড়ী মোড়সহ গোটা শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
বরিশালে মহাসড়ক অবরোধ : বরিশালে ভারী বৃষ্টি উপেক্ষা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলে করেছেন। শনিবার দুপুরে তাঁরা নগরের নথুল্লাবাদ ও আমতলা মোড়ে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময় নগরের চৌমাথা এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মৃধা নামে ট্রাফিক পুলিশের একটি বক্স ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) খাবার সরবরাহকারী একটি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সরকারি ব্রজমোহন কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভে অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ এলাকায় যান। এখানে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁদের হাতে ছিল বিশাল জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড।
এ বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনেক অভিভাবককেও অংশ নিতে দেখা যায়। এতে মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। কর্মসূচি চলাকালে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের অপর দিকে পেট্রলপাম্পে একটি ছেলেকে ধারালো অস্ত্রসহ এক যুবককে অবস্থান নিতে দেখে শিক্ষার্থীরা মারধর করেন।
বেলা পৌনে দুইটার দিকে নথুল্লাবাদ থেকে সরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা হাতেম আলী কলেজসংলগ্ন চৌমাথা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বেলা আড়াইটার দিকে এখানে পুলিশ বক্স এপিবিএনের খাবার নিয়ে আসা ট্রাকে হামলা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের খাবার নিয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের গাড়িটি পুলিশ বক্সে আসা মাত্র ট্রাকটির ওপর হামলা করেন বিক্ষুব্ধরা। এ সময়ে তাঁরা পুলিশ বক্সটি ভাঙচুর করেন।
চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ : গণগ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ করা, হত্যাকা-ের বিচার, আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াসহ ৯ দফা দাবিতে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে অংশ নিয়েছে চট্টগ্রাম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।শনিবার বিকেল তিনটা থেকে নগরের কোতোয়ালী থানাধীন নিউ মার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে তারা। এ সময় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
নিউ মার্কেট মোড়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, আমাদের সাথে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত রাজপথেই অবস্থান করবো। এদিকে সমাবেশস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।