আজও রণক্ষেত্র সিলেট : নগরজুড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ আগস্ট ২০২৪, ৫:০৬:০৫ অপরাহ্ন
পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলা : হতাহত অনেক
স্টাফ রিপোর্টার : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনেই রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে পুরো সিলেট। রোববার বেলা ১২টার দিকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলীতে এবং ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, কিশোরসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ২ কিশোরসহ ৫ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেলা ৪টায়ও নগরীর সকল পয়েন্টে থেমে থেমে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। এসময় আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সশস্ত্র অবস্থান নিতে দেখা গেছ।
শিক্ষার্থীরা জানান, ১১টা থেকে কোর্ট পয়েন্টে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করেন তারা। বেলা দেড়টার দিকে নগরীর বন্দরবাজার কোর্টপয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার এলাকায় দেশী-বিদেশী অস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলা করে ছাত্রলীগ। তখন জিন্দাবাজার পয়েন্টে ছাত্র-জনতা তাদেরকে ধাওয়া দিলে ছাত্রলীগ ফিরে আসে। তখন পুলিশ ছাত্র-জনতার উপর গুলীবর্ষণ করে ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তখন ছাত্রলীগ আরো বেপরোয়া হয়ে ছাত্র-জনতা ও নিরীহ পথচারীদের কোপাতে থাকে। এসময় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে আন্দোলনে অংশ নিতে নগরীর কোর্টপয়েন্টে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থী ও জনতা। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন পয়েন্টে আগুন লাগিয়ে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। ছাত্রজনতা নগরীর বন্দরবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, তালতলা, জিন্দাবাজার, মহাজনপট্টি, নয়াসড়ক, বারুতখানা, ওসমানী শিশু পার্কের সামনে বিচ্ছিন্নভাবে জড়ো হয়ে মিছিল স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বন্দর কোর্ট পয়েন্টে ছাত্র-জনতার উপস্থিতি ক্রমশ বাড়তে থাকে। এ সময় তাদের সঙ্গে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা কর্মসূচীতে যোগ দেয়। ছাত্র-জনতা পুলিশকে দেখে ভুয়া ভুয়া স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। দুপুর ১২টার দিকে উভয়পক্ষের মাঝে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ তাদের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল, টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করে এবং ছাত্রজনতার পক্ষ থেকেও ছুড়া হয় ইটপাটকেল। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর ফের বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্ট দখলে নেয় ছাত্রজনতা। তখন নগরীর তালতলা পয়েন্ট এলাকায় আওয়ামীলীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সমবেত হতে থাকেন। বেলা ১টার দিকে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকা থেকে ছাত্রজনতাকে ফের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেতে না চাইলে আবারো একশনে যায় পুলিশ। তখন শিক্ষার্থীরা জিন্দাবাজার পয়েন্টের দিকে চলে যায়। দেড়টার দিকে সামনে পেছনে পুলিশ প্রহরায় কোর্টপয়েন্টে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জিন্দাবাজারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ ডায়বেটিক হাসপাতালের সামনে থেমে যায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে ধাওয়া দিলে তারা ফের বন্দরের দিকে ছুটে আসে। তখন পুলিশ এগিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর গুলীবর্ষণ করে। তখন ছাত্রলীগ আবার এগিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থী ও নিরীহ পথচারীদের কোপাতে থাকে। ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হন। রোববার দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, আন্দোলনকারীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে আমরা প্রতিরোধ করি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা ফাঁকা গুলি চালাই।
প্রসঙ্গত- সরকার পতনের একদফা দাবিতে রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনের শুরুর দিন সকাল থেকে সিলেট মহানগরে যানবাহন কম চলাচল করতে দেখা গেছে। অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে দোকানপাট খোলা শুরু করলেও রোবাবর সিলেটের চিত্র ছিল ভিন্ন।
সকাল ১০টার দিকে বন্দরবাজার, জিন্দাবাজারসহ নগরীর কোনো মার্কেট বা দোকান খোলা দেখা যায়নি। এ ছাড়া এসময় অন্যান্য দিন সড়কে কর্মব্যস্ত মানুষের ছুটে চলা চোখে পড়লেও আজ এমন দৃশ্য ছিল না। সড়কে যানবাহনও ছিল কম।
এদিকে সিলেটে এই আন্দোলন নিয়ে জনসাধারণের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ২০ দিন ধরে চলা বিক্ষোভ-আন্দোলনে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে সিলেট। এই পর্যন্ত আন্দোলনে সিলেটের ৩ জন মারা গেছেন। একজন সাংবাদিক, অপরজন শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও আরেকজন বিদ্যুৎ কর্মকর্তা। বিদ্যুৎ কর্মকর্তা যুবক শুক্রবার হবিগঞ্জে সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।