নগরজুড়ে আতঙ্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ আগস্ট ২০২৪, ৯:১০:৩৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে যেন আতঙ্কের এক নগরী সিলেট। হামলা, গুলি, সংঘর্ষ, পিকেটিং-এ সিলেট নগরে ভীতিকর এক পরিবেশ বিরাজ করছে। স্তব্ধ হয়ে আছে পুরো সিলেট। মানুষজন আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছেননা। সবার মাঝেই অজানা এক শঙ্কা ভর করেছে। কি হচ্ছে প্রিয় সিলেটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১১টা থেকে কোর্ট পয়েন্টে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করেন আন্দোলনকারীরা। বেলা দেড়টার দিকে নগরীর বন্দরবাজার কোর্টপয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার এলাকায় দেশী-বিদেশী অস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলা করে ছাত্রলীগ। তখন জিন্দাবাজার পয়েন্টে ছাত্র-জনতা তাদের ধাওয়া দিলে ছাত্রলীগ ফিরে আসে। তখন পুলিশ ছাত্র-জনতার উপর গুলীবর্ষণ করে ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তখন ছাত্রলীগ আরো বেপরোয়া হয়ে ছাত্র-জনতা ও নিরীহ পথচারীদের কোপাতে থাকে। এসময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলীতে এবং ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, কিশোরসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এদিকে কোর্ট পয়েন্ট ও জিন্দাবাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় আশপাশের এলাকাগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে নগরীর জল্লারপার, চৌহাট্টা, জেলরোড, হাওয়াপাড়া, বারুতখানা, তালতলা, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, লামাবাজার, রিকাবীবাজার এলাকায় আতঙ্কিত লোকজন দিগি¦দিক ছুটাছুটি করা শুরু করেন। দুপুর দেড়টার দিকে জিন্দাবাজারের আতঙ্কে জল্লারপার পয়েন্টের দিকে আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষ সরে যেতে চাইলে তাদের উপর পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। গলির ভেতরে এসে লোকজনের উপর হামলা ও ধাওয়ায় আতঙ্কের পাশাপাশি ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা যায়। তাছাড়া দুপুরের পর থেকে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট ও নগর ভবনে পুলিশ পহরায় ওপেন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগ অবস্থান করে। তাদের অবস্থানে কোর্ট পয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজারমুখী রাস্তা পুরোটাই দখলে চলে যায়। এমনকি পথচারী চলাচলেরও কোনো সুযোগ ছিল না। অনেকে হেঁটে এবং মোটরসাইকেল, সিএনজি নিয়ে আম্বরখানা-জিন্দাবাজার থেকে কোর্ট পয়েন্টে এসে রাস্তা না পেয়ে আবার ফিরে যান, কেউ কেউ জল্লারপার হয়ে ঘুরে তালতলা হয়ে বন্দরবাজার আসেন। পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের সহায়তায় এমন আচরণে জনমনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অনেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নির্লজ্জতা কোন পর্যায়ে গেলে তারা অস্ত্রধারীদের সাথে মিশে সাধারণ লোকজনের উপর হামলায় সহায়তা করে। আন্দোলনকারীরা চলে যাওয়ার পর সরকারদলীয় অস্ত্রধারীরা আশপাশের দোকানী ও পথচারীদের এলোপাতাড়ি কোপালো। বৃদ্ধ থেকে অনেক প্রতিবন্ধীও এই হামলা শিকার বলে জানিয়েছেন অনেক লোকজন। যারা কোনোভাবেই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত না। তার বলেন পুলিশের সহায়তায় আন্দোলকারীদের উপর হামলা চালিয়ে পিছু হটে ছাত্রলীগ-যুবলীগ।
এসব ঘটনায় দুপুরের আগেই পুরো নগরজুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। বিভিন্ন ব্যাংক ও অফিস-আদালতে যারা আসেন তারা সব বন্ধ করে জোহরের পরপরই যে যার মতো পারেন ঘরঘাট লাগার চেষ্টা করেন। দুপুর ২টার পর শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। অনেকে এই বৃষ্টির মধ্যে কোনো গ-গোল হবে না মনে করে কেউ ভিজে, কেউ রিকশা-অটোরিকশা যা পান তা নিয়ে বের হয়ে পড়েন। দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর রিকাবীবাজার এলাকায় এক চাকুরীজীবীকে দেখা যায় তার অফিসের গাড়ি রেখে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন হঠাৎ করে দাঙ্গা হাঙ্গামার খবরে সবদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাই অফিস ছুটি দিয়ে দিয়েছে। অফিসের গাড়িতে হামলার আশঙ্কায় তিনি রিকশার জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেও আমরা ঠিকই অফিসে এসেছিলাম কিন্তু হামলাকারীরা হামলা করে আতঙ্ক ছড়িয়ে নিজেরাই আন্দোলন সফল করে দিলো মনে হচ্ছে।
আতঙ্ক আর বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটে একেবারে কমে যায় লোকজনের চলাচল। দুপুরের পর রাস্তায় শুধু রিকশা ও অটোরিকশা এবং অফিস ফেরত লোকজন ছাড়া কোনো মানুষজন ছিলেন না। রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা যাত্রীর অভাবে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এসময় এক দুজন যাত্রী পেলেই তাকে নিয়ে রওয়ানা দিতে দেখা গেছে।