গোলাপগঞ্জে ছাত্রজনতার উপর পুলিশ-বিজিবির গুলী : নিহত ৫
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ আগস্ট ২০২৪, ৯:৩৭:০৬ অপরাহ্ন
গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি : অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষে সিলেটের গোলাপগঞ্জের পৃথক স্থানে ৫ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
রোববার (৪ আগস্ট) বেলা আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে দুজন ও এর আগে ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় একজন নিহতের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান আরো ২ জন। বিকেল পাঁচটার দিকে গোলাপগঞ্জ চৌমহনা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তারা।
নিহতরা হলেন-ঢাকা দক্ষিণের দত্তরাইল গ্রামের আলাউদ্দিনের পুত্র মিনহাজ উদ্দিন (২৫), পৌর এলাকার ঘোষগাও নিবাসী ব্যবসায়ী গৌছ উদ্দিন (৩০)।
এদিকে বিকেলে দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহিন আহমদ। তারা হলেন- ধারাবহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)। এর আগে সংঘর্ষকালে গুলিতে মারা যান নাজমুল ইসলাম। তিনি উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানা গেছে, রোববার দুপুরে গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তাদের সরিয়ে দিতে চায় পুলিশ। এসময় সেখাবে বিজিবিও উপস্থিত ছিলো। একপর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে ছাত্র-জনতার তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। বিভিন্ন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এসময় এলাকাবাসীও সংঘর্ষে জড়িত হন। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে ছাত্র-জনতা ও এলাকাবাসী পুলিশ-বিজির দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে এবং পুলিশ-বিজিবি গুলি, টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবি পিছু হটতে বাধ্য হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ পুরো গোলাপগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বেলা ২টার দিকে পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কিছু মানুষ জড়ো হলে সেখানে পুলিশ ও বিজিবি আসলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে বিদ্ধ হয়ে তাজ উদ্দিন ও সানি আহমদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা পরে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, তাজ উদ্দিনের লাশ নিয়ে পৌরশহরে এসে ধারাবহর এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গোলাপগঞ্জ পৌরশহর ও ঢাকাদক্ষিণ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এর আগে দুপুরে ঢাকাদক্ষিণে এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশ-বিজিবির সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন নাজমুল ইসলাম। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।
প্রসঙ্গত- রোববার বেলা ১১ টা থেকে অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পড়ে পুরো সিলেট। মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের তুমুল সংঘর্ষ চলে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গোলাপগঞ্জে ৫ জন মারা গেছেন। মহানগরসহ সিলেটজুড়ে পুলিশসহ শত শত লোক আহত হয়েছেন।