নগরজুড়ে ভীতিকর চিত্র
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ৯:৩৪:৩৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবরে সিলেটে উচ্ছ্বসিত জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। এসময় তারা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে জমায়েত হন এবং জাতীয় পতাকা উড়ান। তবে ছাত্র-জনতার উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি কিছু সরকারি স্থাপনা ও অফিসে দুর্বুত্তদের হামলা এবং অগ্নি সংযোগের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চোখে পড়ে ভীতিকর এক চিত্র।
বিকেল ৩টার দিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার খবর প্রকাশ হওয়ার পরই নগরীর বিভিন্ন স্থানে সড়কে নেমে আসেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। ছাত্র-জনতার সাথে বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে নারী-শিশুরাও এসে জমায়েতে সামিল হন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিলকারীরা রাস্তায় উচ্ছ্বাস করতে থাকেন।
বিকেল ৪টার দিকে নগরীর মিরের ময়দান পয়েন্টে বিভিন্ন দিক থেকে এসে জড়ো হন আন্দোলকারীরা। সুবিদবাজার, আম্বরখানা, দরগামহল্লাসহ আশপাশের এলাকা থেকে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা এবং হেঁটে স্লোগান দিতে দিতে এসে তারা জড়ো হন। তারা পুলিশ ও আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় কিছু উত্তেজিত জনতা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইসনসে হামলা চালাতে চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীরা তাদের আটকান। এসময় আশপাশের বিভিন্ন সরকারি ভবনে এবং জায়গায় দায়িত্বরত পুলিশরা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ পোশাক পরিবর্তন করে স্থান ত্যাগ করেন। বিভিন্ন সরকারি অফিস থেকে এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনার ছবি খুলে লুকিয়ে রাখার খবর মিলে।
এরআগে সকাল থেকে সিলেটে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। হঠাৎ করে দুপুর বারোটার পর আন্দোলনকারীদের উপর মারমুখী হয়ে ওঠে পুলিশ। দুপুর দেড়টার দিকে তাদের মুহুর্মুহু টিআর শেল ও গুলিতে পুরো জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা ও আম্বরখানা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এমনকি অনেক পাড়ামহল্লার অলিগলিতে পুলিশ টিআর শেল নিক্ষেপ করে। এতে এসব এলাকায় অবস্থানরত আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান এবং আশপাশের বাসাবাড়িতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। টিআর শেলের ধোঁয়ায় অনেক নারী-শিশু ও বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুইটার পর আন্দোলনকারীরা ধীরে ধীরে আবার জড়ো হতে থাকেন। এরপর বিকেল ৩টার দিকে যখন শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবর প্রকাশ পায় তখন আন্দোলনকারীদের আনন্দ ক্ষোভে রূপ নেয়। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে প্রথমেই তারা বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের উপর আক্রমনের চেষ্টা করে। এসময় অনেকে পুলিশ ও স্থানীয় কিছু ছাত্রলীগ-আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। রোববার পুলিশের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ-আওয়ামীলীগ এবং সোমবার পুলিশের মারমুখী আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।
এরপর বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, পুলিশ স্টেশন ও আওয়ামীলীগ নেতাদের বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের খবর মিলে। এসব হামলায় লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, বন্দর পুুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে উত্তেজিত জনতার অগ্নিসংযোগের খবর মিলে। একই সময় সিলেট জেলা পরিষদ ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হতে দেখা যায়। হামলাকারীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিনকে খুঁজতে থাকে। তাকে না পেয়ে চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে এবং জিনিসপত্র লুটপাট করে। উত্তেজিত জনতার অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভাতে এলে হামলায় তারাও আহত হন। অগ্নিকান্ডের ফলে আশপাশের বিদ্যুতের মূল লাইনে আগুন ধরে যায়, এতে বিকেল থেকে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। এসময় বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিলে কেউ ফোন রিসিভ করেন নি, পরে খবর নিয়ে জানা যায় আতঙ্কে তারা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। একই সময় নগরীর নয়া সড়কে ফ্যাসন হাউস ‘মাহা’য় ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। তাছাড়া আওয়ামীলীগ দলীয় অনেক নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসায় হামলার খবর মিলে। নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় দুটি ফার্মেসিতে ভাঙচুরের খবর মিলে। তাছাড়া নগরীর ধোপাদিঘির পারে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের বাসভবনে হামলা চালানো হয়। এছাড়া টিলাগড়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাসভবনে হামলা ও অগ্নি সংযোগ এবং আওয়ামীলীগ নেতা রনজিত সরকার এবং আজাদুর রহমান আজাদের বাসায় হামলার খবর মিলে। তবে হামলার সময় তারা কেউই বাসায় ছিলেন না।
এদিকে বিজয়ের উচ্ছ্বাসের সাথে হামলা, লুটপাটের ঘটনায় পুরো শহর জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারণ হামলা করা এসব স্থাপনায় আওয়ামীলীগ ও পুলিশ ছাড়াও অনেক সাধারণ মানুষ বসবাস করেন। এদের মধ্যে কর্মকর্তা ও কাজের লোকজন আছেন। হামলাকারীরা তো কাউকে আলাদাভাবে চেনার সুযোগ নেই তাই যাকে পাচ্ছে তাকেই হামলা করতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি সাধনের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেন অনেকে। তারা বলেন রাষ্ট্রীয় সম্পদ জনগণের, আওয়ামীলীগের অপরাধের দায়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট কোনোভাবে কাম্য নয়। আর লুটপাটের মাধ্যমে আন্দোলকারীদের মধ্যে দুুষ্কৃতিকারী ঢুকে ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। হামলা ও লুটপাটের আতঙ্কে অনেকে বাড়িঘর লাগিয়ে অন্যত্র সরে গেছেন বলে শোনা গেছে। কেউ কেউ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।