গণভবন, সংসদে ঢুকে উল্লাস, ভাংচুর-লুটপাট
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৮:১১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার দেশ ত্যাগের খবরের সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ পরিণত হয় উল্লাসে। রাজপথসহ অলিগলিও সেজে ওঠে রঙে রঙে। রাজধানী মুখরিত হয়ে ওঠে ‘স্বৈরাচার পালিয়েছে, দেশ আজ সেজেছে’ স্লোগানে।
শেখ হাসিনার পতনের পর গণভবনে ঢুকে পড়েন অসংখ্য মানুষ। তাঁদের গণভবনের মাঠে হাত উঁচু করে উল্লাস করতে দেখা গেছে। তাঁরা স্লোগান দেন। এ সময় অনেকের হাতে গণভবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস দেখা যায়।
বিভিন্ন টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ গণভবন থেকে নামীদামী জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও গণভবনে ঢুকে টেলিভিশন, ফুলের টব, বালতি, মাছ, মাংস নিয়ে বের হতে দেখা যায়। গণভবনের পুকুরে গোসল করতে দেখা যায়।
গণভবন ছাড়াও সংসদ ভবনে জনতার স্রোত লক্ষ্য করা গেছে। সংসদ ভবনের ভেতর থেকে মানুষকে জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা গেছে। কেউ ওখানকার গাছ তুলে নিয়ে বিজয় উল্লাস করছেন, আবার কেউ গাছ নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
মিডিয়া সেন্টারের সামনে দেখা যায়, প্রবেশপথ ভেঙে মাঝবয়সি তরুণেরা মিডিয়া সেন্টারে প্রবেশ করেছেন। তিনতলা ভবনটিতে দলে দলে ঢুকছেন মানুষ।ওই ভবনের সরু গেটটি মাড়িয়ে ভবনের ভেতরে থাকা টিস্যু, চায়ের কাপ, চা তৈরির ইলেকট্রিক কেটলি, চেয়ার-টেবিল, মাস্ক ও বই বের করে নিয়ে যেতে দেখা যায় অনেককে। জাতীয় সংসদের মূল ভবনের মাঝখানে রয়েছে সুইমিং পুল। পুলে নামার প্রবেশপথে মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই। অপরিষ্কার পানিতে লাফিয়ে পড়ছেন জানতা। তারা সাঁতার কেটে বিজয়োল্লাস করছেন। ১৫-১৬ বছর বয়সি এক তরুণ বলেন, ‘অবশেষে স্বস্তি। সংসদ ভবনের পানিতে সাঁতার কাটতে পারলাম।’
সংসদ ভবনে প্রবেশের সব পথই বন্ধ থাকায় ঢুকতে পারছিলেন না জনতা। প্রথমে একজন তরুণ ভবনের দেওয়াল বেয়ে ভবনে প্রবেশ করেন। তিনি একটি দরজা ভেঙে ফেললে আরও কয়েকজন তরুণ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মিডিয়া সেন্টার হয়ে বের হওয়ার সময় দেখা যায়, একদল তরুণ চুরি ঠেকাতে তৎপর। তারা মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সংসদ ভবনের কোনো কিছু চুরি না করার আহ্বানা জানান।
এদিকে, প্রধান বিচারপতি বাসভবনে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। ঘটনাস্থল থেকে বিকেলে ৫টার দিকে বেশ কিছু মানুষ দেয়াল টপকে ১৯ হেয়ার রোডে অবস্থিত প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ঢুকছিলেন। ভেতর থেকে চিৎকার, হইহুল্লোড় ও ভাঙচুরের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পৌনে পাঁচটার দিকে একদল মানুষ বাসভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। তখন নিরাপত্তা রক্ষী ছিলেন না। বাসভবন ভাংচুরের পাশাপাশি বাসভবনে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন। এর কিছুক্ষণ আগে প্রধান বিচারপতি বাসভবন থেকে বের হন।
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেছেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে এ দৃশ্য দেখা যায়। দেখা যায়, ফটক ভেঙে হাজারো আন্দোলনকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় ঢুকে পড়েন। বাড়ির ভেতর থেকে ধোয়াও বের হতে দেখা যায়। ভেতরে ভাঙচুরও চলে।
রাজধানীতে ধানমন্ডির ৩/এ–তে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে এখন স্লোগান দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আজ সোমবার বিকেল ৪টার দিকে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পাশের গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। বিকেল পৌনে টার দিকে সেখান থাকা প্রথম আলো প্রতিবেদক জানান, সেখানে দাউ দাউ করে আগুন জলছে। বিক্ষোভকারীরা নানা স্লোগান দিচ্ছিল।