স্বাভাবিক হচ্ছে নগর, রাস্তায় শিক্ষার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ৯:০১:৪০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: অচলাবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে নগরী। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট খুলেছে। রাস্তায় বেড়েছে যানবাহন। তবে এখনও থানায় পুলিশ এবং রাস্তায় ট্রাফিকের দেখা মিলেনি। জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনীর টহল এবং অবস্থান দেখা গেছে। ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনে এবং ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। রোদে পুড়ে, ঘেমে তাদের বিভিন্ন সড়কে ও পাড়া মহল্লায় এই দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করায় জনমনেও অনেকটা স্বাস্তি ফিরে এসেছে। এমনিক শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে পলায়নের পর আওয়ামীলীগের যেসব নেতাকর্মী বাইরে বেরুতে ভয় পাচ্ছিলেন তাদেরও অনেককে এলাকায় স্বাচ্ছন্দে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। ইতিমধ্যে সহিংসতা এড়াতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুরে নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, রিকাবিবাজার, লামাবাজার, মির্জাজাঙ্গালে শিক্ষার্থীরা যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। এছাড়া বড়ো বাড়ো পয়েন্টে তাদের সাথে আনসার সদস্যদেরও দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। শঙ্কা কমে যাওয়ায় অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক যানবাহন রাস্তায় বেশি দেখা যায়। তাছাড়া আগেরদিন ব্যবসায়ী নেতারা সবাইকে মার্কেট খোলার আহবান জানানোয় সেগুলোও খোলা ছিল। এতে শহরের বাইরে থেকেও অনেক লোকজন আসেন। এতে নগরীতে যানবাহনের চাপ বাড়ে, যানজট তৈরি হয়। তবে অন্য সময়ের মতো দীর্ঘ যানজট কোথাও দেখা যায়নি।
জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় অনেকে কয়েকদিন পর বুধবারই প্রথম ঘর থেকে বেরিয়েছেন। বিশেষ করে আওয়ামীলীগের অনেক স্থানীয় নেতাকর্মীদেরও স্বাভাবিক চলাচল করতে দেখা গেছে, যারা ভয়ে দুইদিন আত্মগোপনে ছিলেন। তবে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সরাসরি জড়িতের অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের কাউকে দেখা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানান।
নগরীর দাড়িয়াপাড়ায় গতরাতে দেখা যায় ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি গৌছুল আলমকে এশার নামাজের পর রাস্তায় দাঁড়িয়ে মুসল্লীদের সাথে গল্প করতে। স্থানীয়রা জানান সরকার পতনের পর সোমবার তিনি আসরের নামাজের সময় মসজিদে ঢুকে ভয়ে আর বের হননি। মাগরিবের পর স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির লোকজন তাকে নির্ভয় দিয়ে বাসায় পৌঁছে দেন। এর একদিন পরই তাকে এলাকায় স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে দেখছেন তারা। ওয়ার্ড বিএনপি নেতা কালিপদ সূত্রধর জানান এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শেখ হাসিনার পতনের খবরে কিছু উশৃঙ্খল লোকজন সেদিন অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করেছিল এবং সাম্প্রদায়িক উষ্কানী দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। স্থানীয়দের শক্ত অবস্থানের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এলাকার দাগী আসামী ও সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়েছে। তাই শান্তি শৃঙ্খলা অটুট আছে। দু একটি চায়ের দোকান বা আড্ডায় যারাই সাম্প্রদায়িক উষ্কানী তৈরির চেষ্টা করেছে তাদের নিভৃত করা হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। অন্যান্য এলাকায়ও একই চিত্র দেখা গেছে বলে লোকজন জানিয়েছেন।
এদিকে রাস্তাঘাটে জমে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতেও দেখা গেছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকায় রাস্তাঘাটে এসব ময়লা আবর্জনা জমে ছিল। এছাড়া সিলেট পুলিশ সুপার কার্যালয়, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িসহ হামলায় যেসব স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেগুলো দেখতে বুধবারও উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। তারা ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করতেও দেখা গেছে।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী জানান, এখন আমরা যানজট নিরসন ও সড়ক পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। সকল ছাত্র-জনতাকে নিজ নিজ এলাকার সহিংসতা প্রতিরোধে কমিটি করতে বলা হয়েছে। তারা নিজ উদ্যোগে কমিটি করছেন।