এসএমপির ৬ থানার কার্যক্রম শুরু, চলছে আন্দোলনও
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ৯:২৩:৫৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সরকার পতন ও নজিরবিহীন আন্দোলনের পর সিলেট মোট্টোপলিটন পুলিশের এসএমপির ৬টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাশাপাশি কোর্ট পুলিশের কার্যক্রমও চলছে। একই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনও অব্যাহত আছে।
বৃহস্পতিবার থেকে এসএমপির উত্তরের কোতোয়ালি, জালালাবাদ ও এয়ারপোর্ট থানার কার্যক্রম চালু হয়। এর আগে বুধবার দক্ষিণ সুরমা, মোগলাবাজার ও শাহপরান থানার কার্যক্রম চালু হয়।এসএমপির ডিসি (প্রসিকিশন) বিএম আশরাফুল উল্লাহ তাহের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, থানায় আসা সেবাগ্রহীতারা এখন সকল সেবা পাচ্ছেন।
জানা গেছে, নগরের বিমানবন্দর, জালালাবাদ, মোগলাবাজার, শাহপরান, কোতোয়ালি ও দক্ষিণ সুরমা থানায় কিছুসংখ্যক পুলিশ সদস্য উপস্থিত হয়েছেন। তাঁরা থানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। সেই সঙ্গে সেবাপ্রার্থীদের সেবা দিতে তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সিলেটের বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা থানায় এসে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছন। সেই সঙ্গে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন।
ওদিকে, পুলিশ বাহিনীর সংস্কার ও কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছেন সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার সিলেট নগরীর মিরের ময়দানস্থ পুলিশ লাইনসে সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশের সদস্যরা মিলিত হয়ে বিক্ষোভ করেন ও ১১ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ঘোষণা দেন।
ফলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম কর্তৃক দেশের সব পুলিশ সদস্যকে বৃহস্পতিবার মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিলেও সিলেটের জেলা ও মহনগর পুলিশের বেশিরভাগই সদস্যই কর্মস্থলে যাননি।
যদিও সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের জানিয়েছেন, নগরের ছয় থানারই সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের কতোয়ালি থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার ফটকে তালা ঝুলছে। ভেতরে কেউ নেই।
তবে বিকেলে ২/৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা বসিয়ে থানার কার্যক্রম আংশিক চালু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিকেলে সিলেট বিএনপির নেতারা থানার কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাতও করেন।
এধিকে পুলিশের অধিস্তন সদস্যরা বৃহস্পতিবার কর্মবিরতির ডাক দিয়ে পুলিশ লাইনসে ‘এই মুহুর্তে দরকার পুলিশের সংস্কার’, ‘ আমার ভাই কবরে কমিশনার কেন বাহিরে’, ‘হৈ হৈ রৈ রৈ বিসিএস গেল কই’ ‘পুলিশ বাহিনী দরকার, পুলিশ হবে জনতার’ সহ নানা প্রতিবাদী স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় পুলিশ লাইনসের আবাসিক পরিদর্শক (আরআই) মো. মোফাজ্জল হোসেন তাদের বিরোধীতা করলে অন্য পুলিশ সদস্যরা মিলে তাকে মারধর করেন। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সমাধান হয়।
পুলিশ সদস্যদের কর্মবিরতী কর্মসূচির সমন্বয়ক কনস্টেবল মো. কামরুল ইসলাম রাকিব বলেন, গত ৫ আগস্ট আমাদের এভাবে অরক্ষিত ফেলে রেখে আমাদের সব অফিসাররা চলে গেলেন। আমার সাধারণ পুলিশ সদস্যরা কত হাহাকার করেছি। তারা কেনে এভাবে আমাদের ফেলে গেলেন। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নাই। ৫ তারিখ আন্দোলনের দিনে আমরা যখন মাঠে ছিলাম তখন আমারে স্যাররা পালিয়ে গেলেন। আমাদের প্রতিটি ওয়ারলেসে তখন আমাদের ভাইদের হাহাকার। সবাই বলতেছে আমাদের ধোয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসছে। মানুষ আমাদের পিঠিয়ে মেরে ফেলতেছে।
তিনি বলেন, আমরা এত পরিমান অরক্ষিত ছিলাম শুধুমাত্র আমাদের অফিসারদের কারণে। আমরা এখন পুলিশের আইডি কার্ড নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারি না। আমাদের স্যাররা তাদের পদপদবী ও স্বার্থ উদ্ধারের জন্য একটি দলের হয়ে আমাদেরকে মিস ইউজ করেছেন। যারা সামনে আমাদের উধ্বতন কর্তৃপক্ষ আসবেন তারা যেন কোনো দলের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ আমাদের না দেন। আমাদেরকে এভাবে যদি কেউ আর কোনো দলের হয়ে কাজ করতে নির্দেশ দেন আমরা সেই নির্দেশ মানবো না। আমরা জনগনের শত্রু হতে চাই না জনগণের সেবক হতে চাই।
পুলিশের ১১ দফার দাবিগুলো হল- বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে সকল পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে তাদের বিচার।বাংলাদেশ পুলিশ কোন সরকার বা রাজনৈতিক দলের অধীনে কাজ করবে না বাংলাদেশ পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের জনগণের সেবা তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবে।
সারাদিনে ৮ ঘন্টার বেশি ডিউটি করানো যাবে না। অধঃস্তন কর্মচারীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোন অবৈধ বা মৌখিক আদেশ পালন করবে না। অদস্তন কর্মচারীদের পদোন্নতি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদোন্নতির মতো অবলম্বন করতে হবে। বাৎসরিক নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিন করাতে হবে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মত অধঃস্থন কর্মচারীদের সোর্স মানি দিতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে ১০ তারিখের মধ্যে টিএ এবং ডিএ বিল পরিশোধ করতে হবে। নতুন বেতন স্কেল প্রণয়ন করতে হবে। ঝুঁকিভাতা বাড়াতে হবে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারস থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেকটি পুলিশ লাইন্স, থানা, ফাঁড়ি, গার্ড, ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনি জোরদার করে নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে।