ড. ইউনুসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪৪:১৫ অপরাহ্ন
*চমকের উপদেষ্টা পরিষদে দুই ‘ছাত্র সমন্বয়ক’ *১২০০ অতিথির উপস্থিতিতে শপথ পড়ালেন রাষ্ট্রপতি *বিএনপি, জামায়াত, জাতীয়পার্টিসহ বিভিন্ন দলের অংশগ্রহন
জালালাবাদ রিপোর্ট : গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঐতিহাসিক পটভূমি রচিত হয়েছিলো। এবার নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুসের শপথ গ্রহনের মধ্য দিয়ে যেন এটির পূর্ণতা পেলো। বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন তিনি। একইসাথে শপথ নিলো ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ। চমকের এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কও।
প্রায় ১২০০ অতিথির উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় তাঁদেরকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তবে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও ১৬ উপদেষ্টার মধ্যে কাল শপথ নিয়েছেন ১৩ জন। বিধান রঞ্জন রায়, ফারুক-ই-আজম ও সুপ্রদিপ চাকমা ঢাকায় না থাকায় তারা শপথ নিতে পারেননি। শিগগিরই তাঁরা শপথ নেবেন বলে জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংগঠক আদিলুর রহমান খান, সিনিয়র আইনজীবী হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুর্শিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকী আজম বীর প্রতীক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদিপ চাকমা, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিধান রঞ্জন রায়, শিক্ষাবিদ ড.আ.ফ.ম খালিদ হাসান, উবিনীগ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদা আখতার, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা যোগ দিলেও ছিলেন না আওয়ামীলীগসহ ১৪ দলের নেতাদের কেউ। বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রথম সারির মাঝখানে বসেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সহধর্মিনী অধ্যাপক আফরোজী ইউনূস।
প্রথম সারিতে প্রধান উপদেষ্টার ডান দিকে বসেন যথাক্রমে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান হাসান মাহমুদ খাঁন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ।
প্রধান উপদেষ্টার বাম দিকে বসেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, এরপর বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টারা বসেন।
দ্বিতীয় সারিতে বসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, জয়নুল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
একই সারিতে বসেন সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, মোস্তাক হোসেন, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, বাসদের খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
দ্বিতীয় সারিতে নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানও ছিলেন। হুইল চেয়ারে করে এ সারিতে বসেন ড. কামাল হোসেন।এরপর তৃতীয় সারিতে বসেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা। শপথ অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেখা যায়নি। তার আসনটি শূন্য ছিল।
এদিকে শপথের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার, বৈষম্য দূর করা, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে মূল কাজ।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বঙ্গভবনের দরবার হলে রাত ৮টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এক কথায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল কাজ কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার চাই। সরকারের মেয়াদ কত দিন হতে পারে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিব্রতকর, কঠিন প্রশ্ন করবেন না। আপনাদের মতো কাজ করতে করতে এই জায়গায় এসেছি। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারে মূল উদ্দেশ্য কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য দূর করা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাই হবে সরকারের মূল উদ্দেশ্য।