রাজনগরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যান নিহত, আহত শতাধিক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ৭:৪০:১৮ অপরাহ্ন
রাজনগর সংবাদদাতা : মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মধুর দোকান নামক স্থানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানা (৫৫) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানা পাঁচগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। শুক্রবার সকাল ১১টায় স্থানীয় বাজারে একটি দোকান লুটপাটকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মধুর দোকানে মহেশ দাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুট করা হয়। এনিয়ে বাজারে দুটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। শুক্রবার সকাল ১১টায় মধুর দোকান নামক স্থানে লুটকারীদের সাথে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা দেওয়ান মিয়ার ভাই ছুনু মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের গ্রামের লোকজন জানলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রক্তা গ্রামের বিএনপি নেতা পিন্টু সুলতানের নেতৃত্বে ও কেওলা গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা দেওয়ান মিয়ার নেতৃত্বে মধুর দোকানে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। উভয়পক্ষের মধ্যে গুলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে শতাধিক লোকজন গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়। খবর পেয়ে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ছানা ঘটনাস্থলে আসেন এবং সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে এবং পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, খবর পেয়ে মৌলভীবাজার ও রাজনগরের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। চেয়ারম্যান নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন, আতিক (১৮), মহেষ দাস (৬০), রুহিত দাস (২২), লিটন দাস (২৩), অজিত দাস (২৬), হিমাংশু দাস (২৫), সুমন দাশ (২৫), সঞ্জিত দাস (৪৫), তারা মিয়া (৪২), দুরুদ মিয়া (৩০), মোক্তার মিয়া (৫৮), শাহজাহান (৩২), আওলাদ হোসেন (৫০), ফয়ছল আহমদ (২৯), সুলতান (৩২), আফান মিয়া (৩৫), বিপ্লব দাস (২৮), শহীদ মিয়া (৫০), লোকমান (৩৫), লিপুন মিয়া (৩৫), আজমল আলী (৫৫), লায়েক (৩৫), জিকু (২৬), জিলু (২৮), ভুট্টু (২৫), সোহেল (২৫), পাভেল (২২), মিনত (৫৫), দিলাবত (৩০), ইয়াবর (৩৬), নুরুল আমিন (২৮), তারিস আহমদ (৬০), জিতু (৬০), এরশাদ (৬০), দুলু মিয়া (৫০), কুনাই মিয়া (৫৫), আলম মিয়া (২৬), হুসাইন (২০), ইসলাম মিয়া (২০), নুরুল ইসলাম (২০), মাহিদ (১৫), মিন্টু (১৬), নাঈম (১৮), সুহেল (২০) সহ উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক। আহতদের রাজনগর, মৌলভীবাজার ও সিলেটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
নিহত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানার চাচাতো ভাই দেওয়ান মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার ভাইকে বিএনপি নেতা পিন্টু সুলতান গুলি করে মেরে ফেলেছে। তারা আমাদের সব দোকান লুটপাট করে নিয়ে গেছে।
অপরপক্ষের পিন্টু সুলতান বলেন, আমি আমার আইস ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সময় সারমপুর ও কেওলার লোকজন বাজারে হামলা চালায়। পরে আমরা তাদের প্রতিহত করি।
সেনাবাহিনীর মৌলভীবাজার ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার হেলাল উদ্দিন জানান, দুইপক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। ধারালো অস্ত্র, ইটপাটকেল ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করা হয়েছে। সংঘর্ষে অনেকে আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা জানান, পাঁচগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানার মৃত্যুর খবর পেয়েছি। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ঘটনাস্থলে সেনাবাহীনি মোতায়েন রয়েছে।