নগরে ৬ থানা চালু, নেই পুলিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ আগস্ট ২০২৪, ১২:১০:৩০ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল : শেখ হাসিনা সরকারের পতন পরবর্তী সহিংসতায় এখনো পুলিশ শুণ্য সিলেট নগরীর সবকটি থানা। বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসএমপির ৬টি থানার কার্যক্রম চালু হলেও কোন থানাতেই ওসি, ওসি-তদন্ত ও সাথে দুয়েকজন সদস্য ব্যতিত অন্যান্য পুলিশ এখনো কাজে যোগদান করছেনা। ফলে এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বে মাঠে নামতে পারছেনা এই বাহিনীটি। অর্ন্তবর্তীকালিন সরকারের শপথ নেয়ার পরও জনমনে বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক। স্ব উদ্যোগে নিজেরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন বাসা-বাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান। থানাগুলো শীঘ্রই পুরোদমে চালু নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকা আন্দোলন থেকে শুরু করে শেখ হাসিনা সরকার পতন পর্যন্ত দেশজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা নিহতের পাশাপাশি অনেক পুলিশ সদস্য হতাহতের শিকার হয়েছেন।
দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদফা দাবীতে পরিচালিত কর্মসূচীর প্রেক্ষিতে জনরোষে গত সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এদিন সারাদেশের ন্যায় সিলেট এসপি অফিসের পাশাপাশি নগরীর প্রায় সবকটি থানায় বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাংচুর, লুটপাট-অগ্নিসংযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে যান। পরবর্তী পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হলেও সারাদেশের ন্যায় সিলেটের থানাগুলোতে যোগদান করছেন না পুলিশ সদস্যগণ। সীমিত আকারে মহানগরের আওতাধিন ৬টি থানা চালু হলেও সদস্যরা যোগদান না করায় কার্যক্রমে ফিরতে পারছেনা থানাগুলো।
মাঠ পর্যায়ের একাধিক পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ সদস্যরা এখনো চিন্তিত; তাই থানায় যোগ দিতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে তাঁদের কর্মস্থলে ফেরানোকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন এসএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। তাই শীঘ্রই থানাগুলো পুরোদমে চালু নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
জানা গেছে, একযোগে সব থানা ফেলে পুলিশ সদস্যদের পালিয়ে যাবার ঘটনা অতীতে বাংলাদেশে কখনো দেখা যায়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ ধরনের ঘটনা বিরল বলে উল্লেখ করছেন বর্তমান ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, অনেক সময় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনা দেখা যায়। পুলিশের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো কেন সেটি এক বড় প্রশ্ন।
এদিকে দেশের থানার ওসি ও এসআইদের নিয়ে গঠিত পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ফেরাতে কিছু সংস্কার কাজ অবশ্যই করতে হবে।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ৫ দিন ধরে সিলেটসহ দেশজুড়ে কর্মবিরতি পালন করছে বাংলাদেশ পুলিশের বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। সমন্বয় কমিটির দেওয়া ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বৃহস্পতিবার সিলেট পুলিশ লাইন্সে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে কবে নাগাদ তারা কাজে যোগ দেবেন সে বিষয়টি এখনও ‘অজানা’।
সিলেট মেট্রোপলিট পুলিশের একাধিক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ আমাদেরকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নিজেরা নিরাপদে থাকেন। ৫ আগস্ট আমরা প্রাণভয়ে থানা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছি। শীর্ষ কর্মকর্তাগণ আমাদেরকে কোন নির্দেশনা না দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। সদস্যদের যারা পালিয়ে গেছেন তারা বেচে থাকতে পেরেছেন। যারা থানায় ছিলেন তাদের অনেকেই নিহত হয়েছেন। দেশের দায়িত্বশীল বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এমন আচরণে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের মনোবল ভেঙ্গে পড়েছে। কিছু কিছু সদস্য ইতিমধ্যে কাজেও যোগদান করতে শুরু করেছেন। তবে অধিকাংশ পুলিশ সদস্য কাজে যোগদান থেকে বিরত রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। ফলে পুলিশ লক্ষ্য করে হামলা হয়। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপর পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠপর্যায়ের সদস্যরা অনেকটা আত্মগোপনে চলে যান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় এসএমপি কার্যালয়সহ বিভিন্ন থানায় কর্মকর্তারা আসতে শুরু করেছেন।
এদিকে নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম গত বুধবার সব পুলিশ সদস্যকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টা শেষ হলেও সিলেটসহ দেশের অধিকাংশ থানায়ই পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। থানাগুলো পাহারার দায়িত্ব পালন করছেন আনসার সদস্যরা।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টায় এসএমপির কোতোয়ালী থানার ওসির ব্যবহৃত নাম্বারে ফোন দিলে রিসিভ করেন থানার ওসি তদন্ত ফজলুর রহমান। তিনি জানান, থানার কার্যক্রম চালু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু পরিচালনার জন্য সদস্য নেই। দুয়েকজন সদস্য নিয়ে থানায় বসে আছেন।
শুক্রবার সাড়ে ৭ টার দিকে জালালাবাদ থানার ওসি মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, থানা চালু হয়েছে। আমি আছি। কিন্তু ফোর্স না থাকলেও কার্যক্রম চলবে কিভাবে। দুয়েকদিনের মধ্যে সদস্যরা যোগদান করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শুক্রবার রাত ৮টায় শাহপরান থানার ওসি তদন্ত ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য রাজন জানান, থানা চালু আছে আমরা কয়েকজন বসে আছি। তবে কার্যক্রম চালানো যাচ্ছেনা। সদস্যরা ফিরলে ফের পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জাকির হোসেন খানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম্বারে একাধিকার ফোন দিলেও কেউ রিসিভ করেনি। ফলে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে সিলেটের পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এসপি অফিসের কার্যক্রম চালু হয়েছে। অফিস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় আমরা আপাতত পুলিশ লাইন্সে বসে কাজ করছি। জেলার আওতাধিন সব থানা চালু হয়েছে। পুরোদমে কার্যক্রম চালাতে একটু সময় লাগবে। তিনি বলেন, এসপি অফিসের ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি।