শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম, পদত্যাগের হিড়িক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ আগস্ট ২০২৪, ১০:০৮:৪৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুর্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একে একে পদত্যাগ করছেন বিচার বিভাগসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ মিছিল। এরপর একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের অনেকেই। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার সরকারের পদত্যাগের পর এখন স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কারের পাশাপাশি শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
প্রধান বিচারপতি : শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এর আগে সকাল ১১টায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট চত্বরে জড়ো হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের দুপুর ১টার মধ্যে পদত্যাগের এ আলটিমেটাম দেন। পরে ফুলকোর্ট সভা স্থগিত করা হয়। এরপর পদত্যাগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি সন্ধ্যার মধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছিলেন।
আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতি : আপিল বিভাগের ৫ জন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন এম ইনায়েতুর রহিম, মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহিনুর ইসলাম ও কাশেফা হোসেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবরে তাঁদের পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে। শনিবার বিকেলে তাঁদের পদত্যাগপত্র পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের পর আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির পদত্যাগপত্র দেওয়ার তথ্য জানা গেল। বিচারপতিদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলেছে, বিকেল ৪টার দিকে দুই বিচারপতি পদত্যাগপত্র পাঠান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর: এর এক দিন আগে শুক্রবার পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। পদত্যাগ করেছেন। এর আগে গত বুধবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে বিক্ষোভ হয়েছে। ওই দিন একদল কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। তাঁরা একজন ডেপুটি গভর্নরকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন এবং আরো চারজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে পদত্যাগে রাজি করান।
অ্যাটর্নি জেনারেল: গত বুধবার রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তাকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব: শেখ হাসিনার সময়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করা মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে তাকে সরকারি চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার এক আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, মুখ্য সচিব পদে তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য: একই দিন পদত্যাগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল। তিনি ছাড়াও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সাতটি হলের প্রভোস্ট।
শাবিপ্রবি উপাচার্য: শনিবার আরো পদত্যাগ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কারণে আমার পদ থেকে পদত্যাগ করছি। আজকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগ : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া পদত্যাগ করেছেন।
শনিবার বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন পদত্যাগী সহ–উপাচার্য মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, একই সঙ্গে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষও পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা তিনজনই গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
তবে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মুঠোফোনে গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ফোন দিলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। এ জন্য তাঁদের বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক : নিয়োগ পাওয়ার ১৮ দিনের মাথায় পদত্যাগ করলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. হারুন-উর-রশীদ আসকারী। শনিবার তিনি পদত্যাগ করেছেন। বাংলা একাডেমি ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গত ২৪ জুলাই মো. হারুন-উর-রশীদ আসকারী বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। যোগদানের দিন থেকে পরবর্তী তিন বছর মেয়াদে তাঁকে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি ১৯৯০ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গবেষক হিসেবে তাঁর প্রবন্ধ ও বেশ কয়েকটি বই আছে। অধ্যাপক মো. হারুন-উর-রশীদ আসকারীর আগে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
আইজিপি: গত মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের চুক্তি বাতিল করে নতুন আইজিপি হিসেবে মো. ময়নুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক আইজিপি আত্মগোপনে আছেন।
বেরোবি উপাচার্য : গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হাসিবুর রশীদ। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রাষ্ট্রপতির সচিবের কাছে উপাচার্য তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী।
রাবি উপাচার্য: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ ঊর্ধ্বতন ২৯ প্রশাসক ও কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) উপাচার্যসহ কর্মকর্তারা তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।