ফুল কোর্ট সভা আহবান, শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম : পদত্যাগে বাধ্য হলেন প্রধান বিচারপতি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ আগস্ট ২০২৪, ১১:১৩:৩৪ অপরাহ্ন
আরো ৫ বিচারপতিরও পদত্যাগ
জালালাবাদ রিপোর্ট: বিষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র এ কথা জানিয়েছে।
প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। বেলা দেড়টার দিকে জানা যায়, প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বেলা দুইটার দিকে আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছেড়ে চলে যান।
আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। শনিবার তাঁরা আইন মন্ত্রণালয়ে এই পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য পাঁচ বিচারপতি হলেন এম ইনায়েতুর রহিম, মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহিনুর ইসলাম ও কাশেফা হোসেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবির বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল দুপুরে সচিবালয়ে বলেন, গণ-আন্দোলন থেকে পদত্যাগের দাবি উঠলে সেটিকে কতটুকু সম্মান প্রদর্শন করতে হয়, সেটা প্রধান বিচারপতি বুঝতে পারবেন বলে প্রত্যাশা থাকবে। পরে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা অনুসারে, ফুল কোর্ট সভা ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সকাল সোয়া ১০টার ফুল কোর্ট সভা বন্ধ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। ফুল কোর্ট সভা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া তাঁর ফেসবুক পেজে সকালে স্ট্যাটাস দেন। তিনি বিনা শর্তে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে ও ফুল কোর্ট মিটিং বন্ধ করার দাবি জানান স্ট্যাটাসে।
ওই পোস্টে আসিফ মাহমুদ জানান, ফ্যাসিস্ট হাসিনা কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রধান বিচারপতিসহ অ্যাপিলেড ডিভিশনের সাতজন বিচারপতির পদত্যাগ চাচ্ছি আমরা। জেলা জজকোর্টের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলনের সবার প্রতি আহ্বান, কোনো জেলায় জজকোর্টের দিকে অবস্থান নেবেন না।
কোটা সংস্কার নিয়ে গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, হাইকোর্টের দেওয়া রায় নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানিতে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, এত আন্দোলন কিসের রাস্তায় শুরু হয়েছে? আন্দোলনের চাপ দিয়ে কি হাইকোর্টের রায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?
ফুল কোর্ট সভা কী?
শনিবার সকালে ফুলকোর্ট সভা ডেকেছিলেন বাংলাদেশের বিদায়ী প্রধান বিচারপতি। তবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রবল প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে সেই সভা বাতিল করা হয়। ঘটনা পরম্পরায় পদত্যাগ করেছেন প্রধান বিচারপতিও।
সুপ্রিম কোর্টকে বাংলাদেশের সংবিধানের রক্ষক এবং ব্যাখ্যাকারী বলা হয়। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্তর এই সুপ্রিম কোর্ট। আর প্রধান বিচারপতিই বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশের সর্বোচ্চ এ আদালতে দুইটি বিভাগে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ দুটি বিভাগ হলো আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ। এই দুই বিভাগের সকল বিচারপতির অংশগ্রহণে যে সভা অনুষ্ঠিত হয় তাকেই ‘ফুল কোর্ট’ সভা বলা বলা হয়।
বিচার বিভাগের প্রধান নির্বাহী হিসেবে এই সভা আহ্বানের এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির। এতদিন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগে মোট ৯০ জন বিচারপতি ছিলেন। এর মধ্যে আপিল বিভাগে সাতজন এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৮৩ জন বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। ‘ফুল কোর্ট’ বৈঠকে বিচার বিভাগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সবার সাথে আলোচনা করেন প্রধান বিচারপতি। অনেক সময় জরুরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও এ সভা আহবান করা হয়ে থাকে।