বিএনপি ও জামায়াতের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪৫:৩০ অপরাহ্ন
দেশের স্থিতিশীলতার উপর গুরুত্বারোপ, অন্তবর্তী সরকারকে সহযোগিতা দেয়ার প্রত্যয়
জালালাবাদ রিপোর্ট: প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুসের সাথে বৈঠক করলো বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন। এসব বৈঠকে দেশের স্থিতিশীলতা আনয়ন ও বর্তমান পরিস্থিতিসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে অন্তবর্তী সরকারকে সবধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে বলে আশ^স্থ করা হয়েছে। একইসাথে সরকারকে সকল ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিএনপি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে যে, আওয়ামী লীগ দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে । অন্যদিকে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চক্রান্ত চলছে বলে প্রধান উপদেষ্টাকে সতর্ক করেছেন জামায়াত নেতারা।
বিএনপির সাথে বৈঠক :
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদল নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলেনি বলে জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি বলেন, নির্বাচনের যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাঁরা সরকারকে সময় দিচ্ছেন।
সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলিনি। আগেও বলেছি, এটার জন্য কিছু সময় লাগবে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে। আমরা তাদের অবশ্যই সেই সময় দিচ্ছি। আমরা তাদের সব বিষয়কে সমর্থন দিচ্ছি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা একটা কথা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি, বর্তমানে দেশে যে অস্থিরতার চেষ্টা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা, সাম্প্রদায়ি কতার ধোঁয়া তোলা হচ্ছে, এগুলোতে জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হন। জনগণ যাতে আগের মতো ধর্মীয় সম্প্রীতি অক্ষুণœ রেখে, জনগণের নিরাপত্তাকে অক্ষুণœ রেখে সরকারকে সহায়তা করেন। আমরা পুরোপুরিভাবে সেভাবে সহায়তা করছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গণতন্ত্র হত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষের ওপর দীর্ঘদিন অত্যাচার, নির্যাতন চালিয়ে মানুষকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে তার থেকে মুক্তি পেয়ে মুক্ত পরিবেশে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম বসেছেন বিএনপির নেতাদের সঙ্গে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী কী করা যায়, সে বিষয়ে তাঁরা মতামত দিয়েছেন। সরকারও তাদের মতামত জানিয়েছে।
এখন মনে করি সরকারকে সহায়তা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের একমাত্র কর্তব্য-এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে মহলটি, যারা মানুষের অধিকার হরণ করেছিল, তারা আবার বাইরে থেকে, এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে অবস্থান নিয়ে, সেখান থেকে বাংলাদেশের বিজয় নস্যাৎ করার চক্রান্ত করছে।
আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্যজনক, এত হত্যা-নির্যাতনের পরও সেই দলটি আবারও বিভিন্ন রকম কথা বলছে। তিনি মনে করেন এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সব দলের সঙ্গে সরকারের কথা বলা প্রয়োজন, কিন্তু হত্যাকারীর সঙ্গে নয়।
ভারত থেকে আওয়ামী লীগ প্রধান বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারা হামলা, ভাঙচুর করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে।
বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
জামায়াতের সাথে বৈঠক :
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে জামায়াতে ইসলামী। সোমবার বিকাল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ও কার্যালয় যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। দেশের নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা ধর্মীয় নাকি রাজনৈতিক কারণে হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। ধর্মীয় কারণে হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না, রাজনৈতিক কারণেও হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে।
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, এ নিয়ে কথা হয়নি। এখানে দলীয় কথা বলতে আসিনি। তবে কেউ নিষিদ্ধ করলেই আমরা নিষিদ্ধ হয়ে যাই না। তারা ভুল কাজ করেছে, যার মাশুল দেশবাসীকে দিতে হচ্ছে।
জামায়াতের আমির বলেন, উনারা কেবল বসলেন, মাত্র চার দিন হলো, আমরা দেখতে চাই উনারা কীভাবে জাতিকে নিয়ে এগোতে চাচ্ছেন। সমস্যাগুলোর সমাধান কীভাবে করেন। যৌক্তিক সময়ে সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন জাতির জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট চলছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার দাওয়াতে এখানে এসেছিলাম। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এখন করণীয় কী, সেই বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
জামায়াত আমির বলেন, দেশ আমাদের সবার। দেশ ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো। আমরা যদি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করি সবাইকে সহযোগী করি, এখন যারা দায়িত্বে এসেছেন তাদের সহযোগিতা করি, তাহলে দেশ একটা শৃঙ্খলা ও সুন্দরের মধ্যে আসবে মনে করি।
তিনি জানান, বৈঠকে যারা আহত হয়েছে তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সুস্থতা কামনা করেছি। দেশের বিভিন্ন ভালো মন্দ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। জামায়াত আমির আরো বলেন, দেশের এই কঠিন মুহূর্তে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ও সহায়-সম্পদে হামলা চালিয়ে কোনো কুচক্রী মহল যাতে পানি ঘোলাটে করতে না পারে, সেজন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির পাহারাদারের ভূমিকা পালন করে আসছে। যেহেতু বর্তমানে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করেছে, সেজন্য ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। তাই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের পাহারা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের (সাবেক এমপি) ও মাওলানা আ. ন. ম শামসুল ইসলাম (সাবেক এমপি), সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ (সাবেক এমপি) ও অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো: সেলিম উদ্দিন।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক যথাক্রমে উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
বিএনপি ও জাময়াতের পরে গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার রাষ্ট্রীয় বাসভবনে বৈঠক করেছে।