জকিগঞ্জে মেয়র পদে দুই ভোটে হেরে আইনি লড়াইয়ে ৬ ভোটে জয়ী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ৮:০৭:৫০ অপরাহ্ন
জকিগঞ্জ প্রতিনিধি: নির্বাচনের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ (জগ প্রতীক) আইনি লড়াই শেষে ৬ ভোটে বিজয়ী হয়ে মেয়র হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করেছেন।
মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দিকী তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান।
এরআগে গত ৪ আগস্ট রোববার নির্বাচন কমিশন তাঁর মনোনয়নপত্র অনুসারে তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। ফলে নির্বাচনের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর আগের মেয়র আব্দুল আহাদকে হটিয়ে ফারুক আহমদ মেয়রের চেয়ারে আসীন হয়েছেন। এতে ফারুক আহমদের ভোটারদের মাঝে আনন্দের জোয়ার বইছে।
সূত্র অনুসারে, ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারী সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ শেষে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আহাদকে (নারিকেল গাছ প্রতীক) দুই হাজার ৮৩ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করেন তৎকালীন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাদমান সাকীব। ঘোষিত ফলাফলে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র¿ প্রার্থী ফারুক আহমদ (জগ প্রতীক) দুই হাজার ৮১ ভোট পান। ওই দুই প্রার্থীর মধ্যে মাত্র দুই ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয়ের পার্থক্য দেখানো হয়। ফলাফল ঘোষণার পরপরই ওই ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদ ভোট পুনরায় গণনার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে মৌখিক ও লিখিতভাবে আবেদন করেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শাদমান সাকীবের কাছে। কিন্তু পরাজিত মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ পাওয়ার পরও রিটার্নিং কর্মকর্তা আমলে নেননি। ভোটের পরদিন নির্বাচন কমিশনেও ভোট পুনরায় গণনা চেয়ে লিখিতভাবে দাবি করেন ফারুক আহমদ। তখনও কোন প্রতিকার পাননি।
তারপর হাইকোর্টে ফারুক আহমদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি তুলে ধরে অবৈধভাবে ঘোষণাকৃত বিজয়ী মেয়র প্রার্থীর ফলাফলের গেজেট স্থগিত ও ভোট পুনরায় গণনার আবেদন করেন। রিট আবেদনের পর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হাসান হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শেষে ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র পদের ফলাফল ও গেজেট স্থগিত করে এক মাসের মধ্যে ভোট পুনরায় গণনার নির্দেশ দেন। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিজয়ী মেয়র আব্দুল আহাদ আপিল করলে হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত হয়ে যায়। ফলে মেয়র পদে আব্দুল আহাদ ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গেজেট পেয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে শপথবাক্য পাঠ করে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে পরাজিত মেয়র প্রার্থী ফারুক আহমদ হাইকোর্ট থেকে দায়েরকৃত রিট প্রত্যাহার করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সিলেটে ২০২১ সালের ৯ মার্চ ৩নং, ৪নং, ৫নং, ৬নং ও ৯নং ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র সমূহের ব্যালট পেপার ফের গণনা করে অবৈধভাবে নির্বাচিত মেয়র পদের ফলাফল বাতিল করে তাঁকে নির্বাচিত করার জন্য মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর ট্রাইব্যুনাল দরখাস্তকারীর মানিত সাক্ষী এবং বিবাদী পক্ষের সাফাই সাক্ষী গ্রহণ করে যুক্তিতর্ক শেষে ভোট পুনরায় গণনার আদেশ দেন। ওই আদেশের পর তিন ধাপে ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ, ৫ জুন এবং ৫ জুলাই বিচারকের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের আইনজীবীকে সামনে রেখে ট্রাইব্যুনালে ভোট পুনগণনা করা হয়। তখন উভয়পক্ষের আইনজীবীর মতামতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভোট পুনগণনায় দেখা যায়, পরাজিত মেয়র প্রার্থী ফারুক আহমদ ২ হাজার ৭১ ভোট এবং আব্দুল আহাদ ২ হাজার ৬৫ ভোট পান। আব্দুল আহাদের চেয়ে ছয় ভোট বেশি পাওয়ায় মামলাকারী ফারুক আহমদকে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সিলেটের বিচারক আরিফুজ্জামান ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নির্বাচিত ঘোষণা করেন।