সর্বত্র শুদ্ধি অভিযান: প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪৪:৩৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পতন হলো শেখ হাসিনা সরকারের। গণরোষে ওইদিনই ভারত পালিয়ে যান দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দলের নেতারাও চলে যান আত্মগোপনে। এরমাঝে গঠিত হয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পরই বদলে যাচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতি। প্রশাসনে শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। হচ্ছে ব্যাপক রদবদল।
সরকারের কঠোরতা, ছাত্রদের অনড় অবস্থানে প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, আইজিপি, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, একাধিক পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো ভিসি, প্রক্টর, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানসহ অনেকে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আবার কাউকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে প্রশাসনের সর্বত্র নড়েচড়ে বসেতে শুরু করেছে।
ইতিমধ্যে বিচার বিভাগে নতুন প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নিয়েছেন। আপিল বিভাগে ৩ বিচারপতি, হাইকোট ডিভিশনে ৫ বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দেশ পেয়েছে নতুন এটর্নি জেনারেল। দায়িত্ব নিয়েছেন নতুন আইজিপি, র্যাব ডিজি, ডিজিএফআই ডিজি, এনএসআই ডিজি, ডিএমপি কমিশনারসহ বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের নতুন কর্মকর্তা। সর্বত্র পরিবর্তনের ফলে প্রশাসন যেন পাচ্ছে নতুন রূপ। ফিরেছে ভিন্ন আমেজে। নতুন নিয়োগকৃতদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে কঠোর নতুন সরকারও।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন পদে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে নতুন দপ্তর দেওয়া হলেও অধিকাংশকেই সরিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামকে সরিয়ে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। রদবদল হওয়াদের মধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ আলী মিয়াকে পুলিশ অধিদপ্তরে, অতিরিক্ত আইজিপি মো. তওফিক মাহবুব চৌধুরীকে পিবিআই প্রধান, অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে খাগড়াছড়ির এপিবিএন ট্রেনিং সেন্টারে, অতিরিক্ত ডিআইজি এ এফ এম আনজুমান কালামকে সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ডিএমপির ১৮ ওসিকে বদলি করে ঢাকার বাইরে পাঠানো হয়েছে। আরো অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে গতকাল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্রুতই প্রশাসনে আরও বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তবে এই পরিবর্তনের মধ্যে অনেক সিনিয়র-জুনিয়র কর্মকর্তা ভোল পাল্টিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। রাতারাতি অনেকেই সুর পাল্টে মিশে গেছেন বর্তমান স্রোতের সঙ্গে। তবে চিহ্নিত আওয়ামী ঘরানার কর্মকর্তা এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলা কর্মকর্তারা আছেন বেকায়দায়। তাদের অনেকেই স্বেচ্ছায় অবসরে যাচ্ছেন। তবে তাদের কর্মকালীন আর্থিক বিষয়ে তদন্তের কথা উঠেছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের দায়িত্ব। এসব মন্ত্রণালয়/বিভাগের দায়িত্বে থাকা সচিবদের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বৈঠকে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো দ্রুত সচল ও গতিশীল করতে সচিবদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে সরবরাহব্যবস্থায় যাতে কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরদিন থেকেই বঞ্চিত কর্মকর্তারা জোট বেঁধে সচিবালয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বঞ্চিতদের নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন মো. আবদুর রউফ। তিনি একই মন্ত্রণালয়ের আইন অনুবিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।
এখন বিভিন্ন দপ্তর প্রধান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত সচিব, এমনকি ক্ষমতা দেখানো উপসচিব পর্যায়েও পরিবর্তন আনা হবে বলে জানা গেছে। সরকারের অনেক সচিবকেও পরিবর্তন করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও বাতিল করা হবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব কর্মকর্তা লাভবান হয়েছেন, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাদের সরানোর জন্য আন্দোলন হচ্ছে জোরালোভাবে।
প্রশাসনের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে কতিপয় কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সবকিছু যদি নিয়মের মধ্যে হতো, কোনো ব্যক্তি বা দল দেখা না হতো তাহলে আমাদের কারও এসবের জন্য জমায়েত হতে হতো না। এখন মুহূর্তের মধ্যেই সবাই জনপ্রশাসনে ভিড় করছেন। কারণ আগের সরকারের সময় সুবিধাভোগী কর্মকর্তারাই আমাদের বঞ্চিত করেছেন। অথচ আমাদের সবারই যোগ্যতা-দক্ষতা আছে।
সূত্র জানায়, মাঠ প্রশাসনে নতুন ডিসি দেওয়ার কথা ছিল। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুতই মাঠ প্রশাসনেও সংস্কারের উদ্যোগ নেবে বলে জানা গেছে। প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনেও রাজনৈতিক বিবেচনায় কর্মকর্তারা ডিসি-এসপি হয়েছেন। সে কারণে দ্রুতই পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন অনেকে।