শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ৯:৩৭:৪৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে তদন্ত সংস্থার প্রধান কো-অর্ডিনেটর বরাবর অ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম এই আবেদন দায়ের করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত সাভারের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবীর এ-সংক্রান্ত বিষয়ে আবেদন করেন।
বুলবুল কবীরের পক্ষে আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম সাংবাদিকদের জানান, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় আবেদন দায়ের করা হয়েছে। আবেদনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনার তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে আহত হয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখে নিহতরা এর আওতায় থাকবে। ঘটনার স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশকে।
অপরাধের ধরনের বলা হয়েছে, এক থেকে নয় নম্বর আসামির নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামিরা দেশীয় এবং আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র জনতাকে হত্যা করে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অপরাধ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং তৎকালীন সরকারের কতিপয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ ও কতিপয় অসাধু র্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ,ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনসমূহ।
আরও দুই মামলা: এদিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বুধবার ঢাকার দুটি আদালতে আরও দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে আদালতে। এর মধ্যে একটি ছাত্র হত্যার এবং অপরটি সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীকে অপহরণের অভিযোগে। এর আগে মঙ্গলবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ নিয়ে দুই দিনে আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের হলো।
রাজধানীর কাফরুলে ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজনের (১৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহম্মেদ হুমায়ুন কবিরের আদালতে মামলার আবেদন করেন নিহত রাজনের ভাই রাজিব (৩২)। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে কাফরুল থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য মইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান কচি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজি মেজবাউল হক সাচ্ছু, সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহম্মেদ মজুমদার, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মানুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, উত্তর সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ নেতা সালামত উল্লাহ সাগর, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সদস্য দীপংকর বাছার দীপ্ত। এছাড়া আওয়ামী লীগের আরও ৫০০-৬০০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
অপর মামলাটি করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীকে অপহরণের অভিযোগে। এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিল সুমু চৌধুরী বুধবার (১৪ আগস্ট) বেলা সোয়া একটার দিকে এই আদেশ দেন। উত্তরা পশ্চিম থানাকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক এবং র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। এছাড়া মামলায় র্যাবের ২০ থেকে ২৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা দাবি করেছেন, ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে উত্তরা এলাকা থেকে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে আটক করা হয়। পরে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নানা নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।