আজবাহার ও দস্তগীর এসএমপিতে বহাল!?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:০০:৩৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বিগত কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সিলেটের বিক্ষোভরত ছাত্রজনতার মুর্তিমান আতংক ছিলেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা এসএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাদেক কাউসার দস্তগীর। সকল আন্দোলনে এই দুই জন শুধু নির্বিচারে গুলিবর্ষণই করেনি ছাত্রজনতাকে অশ্লীল গালাগালি ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে তারা ছিলেন বেপরোয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত কোটা আন্দোলনে সিলেটে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাব ও শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র রুদ্র সেন নিহতের ঘটনার সাথে তারা সরাসরি জড়িত ছিলেন। সাংবাদিক তুরাবের উপর সরাসরি গুলি করেন সাদেক কাউসার দস্তগীর। এসময় বন্দরবাজার এলাকার দায়িত্বে ছিলেন আজবাহার আলী শেখ।
বিগত আন্দোলনে বিভিন্ন ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ছাত্রজনতার আন্দোলন দমনে সিলেট নগরীতে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও নিষ্ঠুর আচরণে এসএমপির ঐ দুই পুলিশ ছিলেন হিং¯্র। আজবাহার আলী শেখ নিরীহ ছাত্রদের উপর নির্বিচারে গুলি করে বলতেন ‘বাপের বেটা অইলে সামনে আসো’। এছাড়া তিনি শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করতে অনধিকার চর্চা করে অবাধে মানুষের ঘরবাড়ীতে ঢুকে যেতেন। এ নিয়ে নগরীর আখালিয়ায় এক বয়স্ক নারী ঐ পুলিশকে বলেন ‘আমার ঘরে ঢুকলে জুতা দিয়ে মারতে বাধ্য হবো’।
বিরোধী মত দমনে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাদেক কাউসার দস্তগীর ছিলেন আরো এক ধাপ এগিয়ে। যে কোন মিছিল কর্মসূচীতে পেছন দিক থেকে নির্বিচার গুলি করা তার কাছে ছিল খেলার মতো। তার নেতৃত্বে বিগত সময়ে সিলেট নগরীতে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের উপর শত শত গুলি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার পর গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হয়রানী করাকে তিনি উপভোগ করতেন। মাঠ পর্যায়ের কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্য ছিলেন তার হুকুমের গোলাম। বিবেকে বাঁধলেও অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতেন না। ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠেন দীর্ঘদিন থেকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালনকারী ঐ পুলিশ কর্মকর্তা।
জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশ সংস্কারের আওয়াজ উঠলেও বহাল তবিয়তে রয়েছে সিলেটের বহুল আলোচিত-সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তা আজবাহার আলী শেখ। অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত আজবাহার এতোদিন সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বদলী করে এখন তাকে উত্তর থেকে এসএমপির উপপুলিশ কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। নগরীতে ছাত্রজনতার সকল কর্মসূচীতে তার নেতৃত্বে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুঁড়ার অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থী ও বিরোধী মত দমনে অতিউৎসাহী বহুল সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তা আজবাহার আলীর বহাল তবিয়তে থাকা ও ফের এসএমপিতে বদলী খবরে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, সিলেট নগরীতে সাংবাদিক এটিএম তুরাবের উপর গুলিবর্ষণের দিনও তিনি বন্দরবাজার এলাকার দায়িত্বে ছিলেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সময় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তখন পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা থেকে রক্ষা পেতে পালাতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যান শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্র সেন। এছাড়া বিগত আন্দোলনে সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে আজবাহার আলীর উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। তখন তিনি অস্ত্রধারিদের নিবৃত না করে উল্টো ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি থেকে শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেন। এমন একজন বিতর্কিত নিপীড়ক পুলিশকে ফের সিলেট মহানগর পুলিশের উচ্চ পদে বদলী করায় শিক্ষার্থীসহ ছাত্রজনতার মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। যেখানে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকার ঘোষণা দিয়েছে নিরীহ ছাত্রজনতার উপর হামলাকারী সকলের বিচার নিশ্চিত করা হবে। তখন আলোচিত আজবহার আলীকে স্বপদে বহাল রেখে বদলী করায় নানা প্রশ্ন উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১০ আগস্ট) আজবাহার আলীকে সিলেট পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের উপ কমিশনার হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) হিসেবে কর্মরত মোহা. সোহেল রেজাকে উপকমিশনার (উত্তর) হিসেবে বদলি করা হয়েছে। এসএমপি কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানা যায়।
এদিকে, পুলিশ কমিশনার স্বাক্ষরিত আরেক অফিস আদেশে সিলেট কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহম্মদ মঈন উদ্দিনকে বদলি করে পুলিশ লাইনন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত মোহাম্মদ নুনু মিয়াকে।