প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ৯:৪৭:৪৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার জনপ্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে। দলীয়করণের বৃত্ত ভেঙে পেশাদার ও জনবান্ধব প্রশাসন গড়তে চাচ্ছে তারা। এ প্রক্রিয়ায় সচিব থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও প্রকল্পের পরিচালক পদে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। এ নিয়ে সচিবালয়ে চলছে তোলপাড়। শুধু বুধবারই জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ১১ জনের চুক্তি বাতিল হয়েছে। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে এক সচিবকে। আর দপ্তর বদলেছে অন্তত তিন সচিবের। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে রদবদলের তৎপরতা শুরু হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, দুর্নীতিমুক্ত ও ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তাদের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন দক্ষ, যোগ্য ও জ্যেষ্ঠতার পাশাপাশি বিগত দিনে পদোন্নতি বঞ্চিতরা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুরুত্বহীন পদে পদায়ন পাওয়াদেরও আনা হবে দায়িত্বশীল পদে। অতীতে দলের পক্ষ নিয়ে গণবিরোধী অবস্থান, প্রশ্নবিদ্ধ ও কারচুপির নির্বাচন আয়োজনে সরাসরি সম্পৃক্ত, বিরোধী মত দমন ও মিথ্যা মামলা দেওয়ার সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারকে জনপ্রশাসনের এসব বিষয় দেখভালের জন্য বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
তালিকা হচ্ছে দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার: সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৬ বছর প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের লোক নিয়োগ ও পদায়ন করেছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করেছে তারা। এজন্য নতুন সরকার সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং যুগ্ম সচিবদের বদলি, ইনহাউস বদলি ও প্রয়োজনে ওএসডি করবে বলে জানা গেছে। নিয়োগ বাতিল হবে প্রকল্প পরিচালকদেরও।
সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রশাসনের চিহ্নিত দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার তালিকা ব্যাচভিত্তিক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি ব্যাচের পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ বেশ এগিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তালিকার পর কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা হবে। যারা সরকারি বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সহযোগী, টিআর, কাবিখাসহ সরকারি নানা রকম বরাদ্দ ও কেনাকাটা প্রক্রিয়ায় লুটপাটে জড়িত ছিলেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
মাঠ প্রশাসনেও আসবে পরিবর্তন: পরিবর্তন আসছে মাঠ প্রশাসনেও। বিশেষ করে ‘দলকানা’ বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে বিভাগীয় কমিশনার পদে ঢাকা ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ১৫তম ব্যাচের এবং বাকিগুলোতে ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক পদে বর্তমানে বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘দক্ষ ও জনবান্ধব প্রশাসন গড়তে নতুন সরকারের প্রচেষ্টা চোখে পড়ার মতো। সরকারকে প্রশাসনের মেধাবী, সৎ ও পেশাদার কর্মকর্তাকে বাছাই করে কাজে লাগাতে হবে। পাশাপাশি দলবাজ কর্মকর্তাদের বাদ দিতে হবে। প্রয়োজনে আউটসোর্সিং থেকে অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তা নিতে হবে। কর্মঠ অনেকে অবসরে আছেন, তাদেরও কাজে লাগানো যেতে পারে।’