ভারপ্রাপ্ত মেয়র পাচ্ছে সিসিক : প্যানেল মেয়র নাকি সিইও!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:২০:৩২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : জনরোষে শেখ হাসিনা সরকারে পতন ও দেশত্যাগ পরবর্তী পরিস্থিতিতে আত্মগোপনে রয়েছেন আ’লীগ নেতা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ১২ দিন ধরে খোঁজ মিলছেনা তার। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সিসিকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। নাগরিক সেবা অব্যাহত রাখতে আত্মগোপনে থাকা সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের স্থলে প্রধান নির্বাহী- নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার। এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এমন প্রজ্ঞাপনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে শুরু হয়েছে কানাঘুষা। সিসিক মেয়রের চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন কে এমন প্রশ্ন নগরবাসীর মুখে। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাকি অন্য কেউ। সিসিকের ৩ জন প্যানেল মেয়র থাকায় এখনই প্রশাসক হিসেবে মেয়রে চেয়ারে বসতে পারছেন না প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তবে ২ জন প্যানেল মেয়র সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় এবং তাদের ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আপত্তি রয়েছে। ফলে তাদের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও সিসিকের একটি সূত্র জানিয়েছে, আজ রোববার সাড়ে ১০টার দিকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন প্যানেল মেয়র ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মখলিছুর রহমান কামরান। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে সিসিকের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিও রয়েছে।
এদিকে গত বুধবার সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ যেসকল কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করা হয়েছে, তাদেরকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এর মধ্যে সংশ্লিষ্টরা পদত্যাগ না করলে নগর ভবন ঘেরাওয়ের আল্টিমেটাম দেন তারা। বুধবার বিকেলে সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে সিসিকের মেয়রসহ সব কাউন্সিলরের পদত্যাগ দাবি করা হয়। পরে বুধবার রাত ১০টার দিকে সকল কাউন্সিলরের পরিবর্তে ছাত্রদের উপর হামলাকারী কাউন্সিলরদের পদত্যাগ চাওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্যানেল মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারে বসা নিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিলেটসহ বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার মেয়র ও অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান ধারাবাহিকভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত রয়েছেন প্যানেল মেয়র ও প্যানেল চেয়ারম্যানও। এমন পরিস্থিতিতে জনসেবা অব্যাহত রাখা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে পূর্ণ আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার। বুধবার (১৪ আগস্ট) স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়। সিসিকের ৩ জন প্যানেল মেয়র থাকায় তাদের দায়িত্ব গ্রহণের আইনী সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও আগে মেয়রের অনুপস্থিতিতে তার অনুমতিক্রমে প্যানেল মেয়র ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু এখন সরকারের প্রজ্ঞাপনে প্যানেল মেয়রগণ উল্লেখ করায় সহজেই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে প্রশাসক হিসেবে বসতে পারছেন না প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণ।
এ ব্যাপারে সিসিকের প্যানেল মেয়র-১ ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মখলিছুর রহমান কামরান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আইনী সুযোগ থাকলে আমি চেয়ারে বসবো। তবে সেটা আজ রোববার কিংবা দুদিন পর হোক। আমি রাজনৈতিক দলের সমর্থন করলেও রাজপথে আমার কোন এক্টিভিটি ছিলনা।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, প্যানেল মেয়র-১ মখলিছুর রহমান কামরান সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে। আজ রোববার তিনি নগর ভবনে আসলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সাংবিধানিকভাবে মেয়রের অনুপস্থিতিতে প্যানেল মেয়র দায়িত্ব পালন করবেন। প্যানেল মেয়রও না থাকলে তখন প্রশাসনিক কর্মকর্তা দায়িত্ব নিতে পারবেন।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলা সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা সেলিম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমরা বর্তমান মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও সকল নির্বাহী প্রকৌশলীসহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া সকল কাউন্সিলরদের পদত্যাগ করতে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। এখন শুনছি একজন প্যানেল মেয়র দায়িত্ব নিবেন। আমরা তার ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি। ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থানের প্রমাণ থাকলে ঐ প্যানেল মেয়রের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসার সিদ্ধান্ত ছাত্র সমাজ মানবেনা।