মৌলভীবাজারে ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ আগস্ট ২০২৪, ৬:০৫:৩৮ অপরাহ্ন
রাজনগর সংবাদদাতা: মৌলভীবাজারের রাজনগরে প্রবল বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং মনু, ধলাই ও লাঘাটা নদীর উপচেপড়া পানিতে ৩০টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এদিকে, মনু ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদীর রাজনগর এলাকায় ৩টি এবং ধলাই নদীর কুলাউড়া, কমলগঞ্জের এলাকায় ৫টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকার বাড়িঘর, কৃষিক্ষেত, মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দুর্গত এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ৩দিন যাবৎ প্রবল বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মনু, ধলাই ও লাঘাটা নদীর উপচে পড়া পানিতে উপজেলার ৩০টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। মনু নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুর্গত এলাকার লোকজন ভারী বন্যার আশংকা করছেন। মনু নদী রাজনগরের উজিরপুর, কান্দিরকুল ও একামধু এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ধলাই নদী কুলাউড়া, কমলগঞ্জের ৫টি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়েছে রাজনগরের লাঘাটা নদীর। মনু নদীর চাদনীঘাট পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ও মাতারকাপন স্লুইস গেইট পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও ৩টি নদীর উপচেপড়া পানিতে ইতোমধ্যে উপজেলার কামারচাক ও টেংরা ইউনিয়নের বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার প্লাবিত এলাকা গুলো হচ্ছে- কামারচাক ইউনিয়নের ইসলামপুর, নওয়াগাঁও, শ্যামেরকোনা, গোবিন্দপুর, জালালপুর, খাসপ্রেমনগর, প্রেমনগর, মিঠিপুর, দস্তিদারেরচক, পঞ্চানন্দপুর, হাটি করাইয়া, দক্ষিণ করাইয়া, তেঘরি, চানখার হাবেলি, পালপুর, মাহতাবপুর, মৌলভীরচক, কালাইকোনা, কামারচাক, জাঙ্গালী, আদমপুর এবং টেংরা ইউনিয়নের টুপিরমহল, উজিরপুর, একামধূ, কান্দিরকুল, কোনাগাঁও, আদিনাবাদ। প্লাবিত এসব এলাকায় খাবার পানি, গোখাদ্য সহ নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় দুর্গত এলাকার লোকজন আত্মীয়-স্বজন ও পাশর্^বর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই আবার গবাদিপশু ও কষ্টার্জিত সম্পদের মায়ায় কষ্ট করে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। ৩টি নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে বিগত ২০২২ এর মত দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশংকায় রয়েছেন অসহায় লোকজন।
রাজনগরের উত্তরাঞ্চলে বহমান কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রাজনগরের উত্তরভাগ ও ফতেহপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী ৫০টি গ্রামের প্রায় অর্ধ্বলক্ষাধিক মানুষ আশংকায় রয়েছেন। এ অবস্থায় রাজনগরে জন প্রতিনিধি না থাকায় দুর্গত মানুষজন আরো অসহায় হয়ে পড়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতদের সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছেন।
কামারচাক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম এ প্রতিবেদককে জানান, গত ৩ দিনের ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল, মনু নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় কামারচাক ইউনিয়নসহ উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রামের শতশত বাড়ি-ঘর প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ তা প্রতিরোধে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়না। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এমন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় তাদের।
জেলার শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান জানান, গত ১৯ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে ২০ আগস্ট সকাল ৬টা পর্যন্ত মোট ১৫৪ মিঃ মিঃ এবং ২০ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে ২১ আগস্ট দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৬৭ মিঃমিঃ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, মনু নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ মূলক কাজ চলমান রয়েছে। আপাতত বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে উভয় নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন মেরামত করা হয়েছে এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গন প্রতিরোধক জিও ব্যাগ ও সিনথেটিক ব্যাগ হস্তান্তর করা হয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে সব ধরণের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, রাজনগরে বিভিন্ন বন্যা দুর্গত এলাকায় গিয়ে দুর্গতদের খোঁজখবর নিচ্ছি এবং তাদের সহযোগিতার ব্যাপারে কাজ করছি। এই মুহুর্তে দুর্গতদের উদ্ধারে পর্যাপ্ত নৌকা প্রয়োজন। পাশর্^বর্তী এলাকার মানুষকে নৌকা দিয়ে দুর্গত এলাকার মানুষকে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।