বন্যার কবলে ৮ জেলা, আরো বিস্তৃত হতে পারে

জালালাবাদ রিপোর্ট: টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের কয়েক জেলার লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ফেনী, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলার বাসিন্দারা। বিভিন্ন জেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ফেনীতে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় একজন নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন একাধিকজন। সিলেট, মৌলভীবাজারেও হঠাৎ বন্যায় ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখো মানুষ।

ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের ৮ জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বন্যা আরও নতুন নতুন অঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারে। বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা। তিনি বলেন, দেশের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে।

এদিকে, ফেনীসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে আটকাপড়াদের উদ্ধারে নেমেছে সেনাবাহিনী। উদ্ধারে কাজ করছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড। প্রস্তুত রাখা হয়েছে হেলিকপ্টারও। ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার রাত থেকে নতুন করে ছাগলনাইয়া উপজেলার অনেক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ সব সড়ক, ফসলি মাঠ এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি উপচে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে বলে স্থানীয়রা বলছেন। পরশুরামে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা যায়। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কয়েকটি ডিঙি নৌকায় লোকজনকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হলেও বেশির ভাগ মানুষ এখনো পানিবন্দী। দুর্গতদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরাও কাজ করছেন। বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর ও আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টার পর ইমিগ্রেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। পানির তোড়ে গাজীর বাজার এলাকায় একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী অবস্থায় আছে ৩০০ পরিবার। টানা চারদিনের বৃষ্টিতে চেঙ্গী ও মাইনী নদী পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে এ মৌসুমে চতুর্থবারের মতো বন্যা দেখা দিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলায়।

জেলার ৫০টি গ্রাম ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। বাঘাইহাট এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় সাজেকে আটকা পড়েছে দুই শতাধিক পর্যটক। খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা এবং মেরুং ইউনিয়নের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেডকোয়ার্টার এলাকা প্লাবিত হওয়ায় রাঙ্গামাটির লংগদুর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় চার হাজার হেক্টর এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি ও ঢলের পানি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত নদীটির পানি বিপদসীমার নিচে অবস্থান করলেও দ্রুতই দুকূল ছাপিয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গোমতীপাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে নদীটিতে এত পানি দেখেননি তারা। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

টানা বৃষ্টিতে কুমিল্লায় গোমতীর চরে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ জানান, সেখানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি সরে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছেন।