উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান : পানি ছাড়ার আগে আন্তর্জাতিক আইন প্রতিপালন করেনি ভারত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ৯:৩৯:৩৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ভবিষ্যতে ভারত যখন বাঁধ খুলে দিয়ে পানি ছাড়বে তার আগে যেন ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে জানানো হয়, সেই বিষয়টি প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেছেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যদি চুক্তি নাও থাকে, আন্তর্জাতিক নদী আইনের নীতি অনুযায়ী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্ষতি করা যাবে না। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী উজানের দেশ হিসেবে ভারতের পানি ছাড়ার আগে আমাদেরকে জানানোর কথা। কিন্তু এবার সেটি প্রতিপালিত হয়নি।
শুক্রবার হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মশাজান খোয়াই নদীর বাঁধ ও জেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এবারের বিষয় থেকে শিক্ষা নিয়ে যত অভিন্ন নদী রয়েছে সেগুলোর সবকয়টার ব্যাপারেই পানি ছেড়ে দেয়ার প্রশ্ন দেখা দিলে যাতে আগাম সতর্কতা বাংলাদেশকে জানানো হয়, সেই বার্তা ভারতে দেয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্ট ড. ইউনুস ভারতীয় দুতাবাসকে বিষয়টি জানিয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে এমন অবস্থা না হয় তার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কাজ করছে।
ভারতের ত্রিপুরার গোমতী নদীর উপর ডম্বুর ড্যাম ৩১ বছর পর ভারি বর্ষণের কারণে খুলে দেওয়া ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে- এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ কথা বললেন।
তবে বন্যা নিয়ন্ত্রণে খননের আগে নদী দখলমুক্ত করার ওপর জোর দিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, দখলদারদের অনেক বড় বড় স্থাপনা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যহীনভাবে ধারাবাহিক অভিযান চালানো হবে।দেশের অভ্যন্তরে বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, বাঁধের মাধ্যমে নাকি জলাধারের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ করা যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সমস্যা আসবেই, কিন্তু এটি না জানানোর কারণে যাতে মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশকে বন্যামুক্ত রাখতে নদীকে নদীর মতো রাখা উচিত। বাঁধগুলো সুরক্ষিত রাখা উচিত।
উপদেষ্টা হবিগঞ্জের গোপায়া ও রাঙ্গারগাও গ্রামের পাশে খোয়াই নদীর বাঁধ পায়ে হেটে দেখেন। এ সময় শত শত লোক তাকে বালু ও মাটি উত্তোলনের কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি অবগত করেন। তিনি সবার কথা মনযোগ সহকারে শুনেন।
এর আগে তিনি জেলার সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক প্রশান্ত সোম মহান, পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন, সেনাবাহিনীর লে. কর্ণেল নাজির ্ও মেজর ইশরাত। উপদেষ্টা বন্যার বিষয়ে হবিগঞ্জের অবস্থা অবগত হন।
হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই নদী উদ্ধার অভিযান প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, যদি হবিগঞ্জকে বাঁচাতে হয় তাহলে খোয়াই নদীকে রক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা শুধু চেষ্টা করব, খুব বেশি টাকার প্রকল্প না নিয়ে অল্প টাকার প্রকল্পে কী করে খোয়াইকে রক্ষা করা যায় সেটার দিকে।
এ সময় খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তেফাজ্জল সোহেল ও বাপার সভাপতি ইকরামুল ওয়াদুদ হবিগঞ্জ জেলার পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে একটি চিঠি দেন। সেখানে দাবী করা হয় জরুরী ভিত্তিতে খোয়াই নদী খনন, খোয়াই নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালি উত্তোলন বন্ধ, পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত করণ, পুকুর ও জলাশয় দখলমুক্ত করণ এবং জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধ করা। উপদেষ্টা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার পৈত্রিক গ্রাম চুনারুঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের নরপতি হাবিলিতে উপস্থিত হয়ে পিতা সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মহিবুল হাসানের কবর জিয়ারত করেন। পরবর্তীতে মুড়ারবন্দ সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীনের মাজার জিয়ারত করেন তিনি।