সিলেটে বৃষ্টি কমেছে : হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজারে বন্যা অপরিবর্তিত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ৯:৪২:৪৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: গতকাল দিনভর সূর্যের দেখা মিলেছে সিলেটে। ফলে ভারী বৃষ্টি হয়নি। ফলে সিলেটে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর চার পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, মৌলভীবাজারের মনু ও হবিগঞ্জের খোয়াই নদের পানিও বিপদসীমার উপরে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত দুই দিন সিলেটের নদ-নদীর পানি বেড়েছে। তবে জেলার কোথাও বনা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটের কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আগের দিনও ওই চার পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপরে ছিল। তবে গতকাল পানি কিছুটা কমেছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীটির শেওলা পয়েন্টে শূন্য দশমিক ২ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে গত কয়েক দিনের তুলনায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেকটাই কমেছে বলে সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। তাদের সূত্র অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোন বৃষ্টি হয়নি। এর আগের ১২ ঘন্টায় বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৩ মিলিমিটার।
এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৮ ঘণ্টায় জেলায় ২১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টি ও ঢলের কারণে সিলেটে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কিছুটা বেড়েছিল। তবে তা আশঙ্কাজনক নয়। বৃষ্টিপাত খুব বেশি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে বলেন, নদ-নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো কুশিয়ারা নদীর চার পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার কোথাও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
মৌলভীবাজারে ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি :
মৌলভীবাজারে শুক্রবার কোনো বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজার জেলার মনু ও ধলাই নদীর ১৩টি স্থানে বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। পৃথকভাবে মনু প্রকল্পের দুটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
অভিরাম ভারি বর্ষণে মৌলভীবাজারের মনু, ফানাই, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। ঢলে এ পর্যন্ত জেলার প্রায় তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চতুর্থ ধাপের এ বন্যায় প্রায় চার লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি অবস্থায় আছে। অনেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে নৌকা না থাকায় বন্যার্তদের উদ্ধার করতে পারছেন না স্বেচ্ছাসেবীরা।
মৌলভীবাজার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী। তিনি শহরের মনু নদীর প্রতিরক্ষাবাঁধের চারটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান, মনু ব্যারেজ, চাঁদনীঘাট ব্রিজ, পৌরসভার ওয়ার্কওয়ে, শাহ্বন্দর এলাকা ও রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকার মনু নদীর বাঁধ ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় মৌলভীবাজারের বিদায়ী জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মনু নদে পানি বেড়ে মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের দুটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সড়কের বালিয়াকান্দি ও শাহবন্দর এই দুটি স্থানের বাঁধ যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। ভাঙনের এই ঝুঁকি এড়াতে সড়ক দিয়ে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর বন্যার পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়ক-সংলগ্ন মনু নদের শহর রক্ষা বাঁধটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এমতাবস্থায় বন্যার পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। সংশিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
অপরদিকে রাজনগরের দুটি স্থানে মনু নদির বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের কদমহাটা এবং রাজনগর কলেজ এলাকায় সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এতে মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক দিয়েও সিলেটে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। ধলাই নদীর বাধ ভেঙ্গে শিমূলতলা নামক স্থানে সড়ক পানিতে তলিয়ে গেলে মৌলভীবাজার-কমলগঞ্জ সড়কে ঝুকি নিয়ে যান চলাচল করছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টায় মৌলভীবাজার শহরের কাছে মনু নদীর পানি চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীতে ১১ সে.মি ও জুড়ী নদীতে বিপদসীমার ১৯৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
হবিগঞ্জে ১৪ হাজার পরিবারের অর্ধ লক্ষাধিক পানিবন্দি :
টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ১৪ হাজার ৩৪০টি পরিবারের ৫৭ হাজার ৫৬০ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে বহু পরিবার গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। পানি না কমায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন মানুষ।
মঙ্গলবার রাত থেকে হবিগঞ্জে প্রচুর বৃষ্টিপাত শুরু হয়। জেলার সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও হয় প্রবল বর্ষণ। বৃষ্টিপাতের কারণে খোয়াই, করাঙ্গি, কুশিয়ারা, ভেড়ামোহনাসহ অন্যান্য নদীর পানি বেড়ে গেছে।
বুধবার থেকে এসব নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে পানি ঢুকে পড়েছে জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে। এতে সাধারণ মানুষের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই।
হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা সুমি রাণী বল বলেন, এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩৪০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৫৬০ জন। তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ১২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র। ক্ষতিগ্রস্তরা অশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন।