বন্যার আঘাতে এলোমেলো ১২ জেলা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩০:৫৪ অপরাহ্ন
মৃত্যু বেড়ে ১৮, দুর্বিষহ জীবনযাত্রা
জালালাবাদ রিপোর্ট: অল্প কিছু পানি সরেছে। তবে পানিবন্দী হয়ে ফেনী, কুমিল্লাসহ ১২ জেলার অর্ধ কোটিরও বেশি মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পানিতে ডুবে আছে গ্রামের পর গ্রাম, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। সেই সঙ্গে ডুবে আছে নলকূপ, পানির ট্যাংক, বিদ্যুতের সাব স্টেশনসহ সবকিছু। নদী, খাল, বিল, পুকুর-পানিতে সব একাকার। বন্যার আঘাত সব এলোমেলো করে দিয়েছে জেলাগুলোর জীবনযাত্রা।
বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলো হলো- ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ এবং রাঙামাটি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব কামরুল হাসান জানিয়েছেন, বন্যায় দেশের ১২ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ জনে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। শনিবার দুপুরে তিনি এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ভারী বর্ষণ কমেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
সচিব জানান, চলমান বন্যায় চট্টগ্রামে ৫, কুমিল্লায় ৪, নোয়াখালীতে ৩, কক্সবাজারে ৩, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীতে ১ জন করে মারা গেছেন। বন্যাকবলিত ১১ জেলার ৭৭ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়ন ও পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৮৭টি। ১১ জেলায় এখন পানিবন্দী আছে ৯ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯।
তবে বন্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ফেনী। যেন পানিতে ভাসছে ফেনী। জেলার প্রায় সব এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে পরিবারের সদস্যদের অবস্থাও জানতে পারছেন না জেলার বাইরে থাকা স্বজনরা। এ অবস্থায় অনেকে নাম-ঠিকানা দিয়ে পরিবারের খোঁজ জানতে এবং উদ্ধার তৎপরতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন। স্থানীয়রা বলছেন, ফেনীতে এমন ভয়াবহ বন্যা আগে কখনো দেখেননি তারা।
বানভাসি মানুষ জানিয়েছেন, এমন দুর্বিষহ অবস্থা ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়ও হয়নি। এবারের বন্যা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। অব্যাহত ভারী বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর জোয়ারের ঢলে এসব জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে।
৯০ ভাগ বাসাবাড়ির চুলা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় রান্নাবান্না বন্ধ আছে। এ অবস্থায় খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে পানিবন্দী পরিবারগুলোয়। বিশুদ্ধ পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। জেলা সদর ও উপজেলা সদরের সড়কগুলোও ডুবে যাওয়ায় প্রতিটি এলাকা এখন কার্যত বিচ্ছিন্ন। গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে যাচ্ছে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি। নৌকার সংকটে মানুষ নিরাপদে আশ্রয়ের খোঁজেও খুব একটা যেতে পারছেন না। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ সেই সুযোগও পাননি। এসব অঞ্চলে নিজ বাড়িতেই আটকা পড়েছেন লাখো মানুষ।
মানুষ আতঙ্কে আছেন। আপাতত জীবনরক্ষার জন্য মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন। অনেকে ত্রাণের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। সব মিলিয়ে অবর্ণনীয় এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখে বানভাসীরা।
পূর্ণিমার জোয়ার, ভারতীয় ঢল ও বন্যার প্রভাবে অস্বাভাবিক পানির চাপ বেড়েছে এসব এলাকার নদ-নদীতে। বিশেষ করে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট উচ্চতায় পানি তৈরি হয় সুন্দরবনঘেঁষা বাগেরহাট জেলার প্রধান নদীগুলোতে। এতে জোয়ারের সময় প্লাবিত হচ্ছে বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা নদীতীরবর্তী নি¤œাঞ্চল ছাড়াও সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা।
এদিকে, দূর্গত এলাকায় সরকারী ও বেসরকারীভাবে ত্রাণ তৎপরতা চললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। খাদ্যের জন্য চলছে এলাকাগুলোতে হাহাকার। খাদ্যের পাশাপাশি এসব এলাকা প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নেই বিদ্যুৎ। সচল নেই মোবাইল টাওয়ার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির জানান, দেশের উত্ত-পূর্বাঞ্চলে বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে, বন্যার প্রভাবে ১২ জেলায় খাদ্যপণ্যের দামও আকাশ ছুঁয়েছে। সরবরাহ না থাকায় নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বাজারে কাঁচা মরিচের দাম ১ হাজার টাকায় উঠেছে।