ফেনীসহ কয়েক জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ৯:৫৪:৪২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও অতি ভারি বৃষ্টিতে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যে ভয়াবহ বন্যা চলছে তা উন্নতির দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। রোববার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বলেন, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষীপুর ও কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতি ‘উন্নতির দিকে’।
দুর্যোগ সচিব কামরুল বলেন, বন্যার কবলে পড়েছে ১১ জেলার ৭৩ উপজেলা, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৪৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা। এ পর্যন্ত ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮ জন।
মৃতের সংখ্যা আগের মতো ১৮ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০ আগস্ট থেকে এ বন্যায় দেশের ১১টি জেলায় ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে চট্টগ্রামে ৫ জন, কুমিল্লায় ৪, নোয়াখালীতে ৩, কক্সবাজারে ৩, ফেনীতে ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ ও লক্ষ্মীপুরে ১ জন আছেন। এ ছাড়া নিখোঁজ দুজন মৌলভীবাজারের।
বন্যা দুর্গতদের জন্য ৩ হাজার ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে সচিব কামরুল জানান, এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৪ লাখ ১৫ হাজার ২৭৩ জন। সেই সঙ্গে ২২ হাজার ২৯৮টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
বন্যার্তদের চিকিৎসায় মোট ৭৪৮টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে বলে জানান তিনি। ফেনী, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
তবে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। রোববার সকাল ৯টায় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশে তেমন বৃষ্টি হয়নি। এতে উজানের নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। ফলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে কোনো কোনো স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থারগুলো বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর কাছাকাছি উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের শঙ্কা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং নি¤œাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও এর কাছাকাছি উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এতে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সাঙ্গু, মাতামুহুরি, কর্ণফুলী, হালদা ও অন্যান্য নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে রোববার কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টায় এই নদীর পানি কমেছে ১৮ সেন্টিমিটার। আর ফেনীর পরশুরাম স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় মুহুরী নদীর তথ্য জানাতে পারেনি বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
রোববার সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের অমলশীদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে এই নদীর পানি বিপদসীমার ৮২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া মনু নদীর পানি মৌলভীবাজার পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় এই নদীর পানি কমেছে ৬৮ সেন্টিমিটার।
বন্যাকবলিত এলাকায় এখনো বিদ্যুৎহীন পৌনে ৮ লাখ মানুষ : ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার অনেক স্থানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ওঠায় ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে বিদ্যুৎহীন রয়েছেন প্রায় পৌনে আট লাখ মানুষ।
তবে, শনিবার (২৪ আগস্ট) পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৯ লাখের কাছাকাছি। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় একদিনের মধ্যেই দুই লাখ গ্রাহক পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছেন। রোববার (২৫ আগস্ট) এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
বন্যাকবলিত এলাকার মধ্যে চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার ও ভোলা এলাকার মোট গ্রাহকের সংখ্যা ৪৮ লাখ ৮৪ হাজার ৩২১ জন। এর মধ্যে বর্তমানে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন সাত লাখ ৮০ হাজার ৭৪৫ জন গ্রাহক। এসব এলাকার ১৬০টি উপকেন্দ্রের মধ্যে ১৪টি এবং ৮৮৪টি ১১ কেভি ফিডারের মধ্যে ১৩১টি ফিডার বন্ধ রয়েছে।